পারিজাত মোল্লা: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে সেনাবাহিনীর মধ্যে পাক চর বিষয়ক মামলার শুনানি চলে। এদিন রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কেও এই মামলার তদন্তভার তুলে দিলেন বিচারপতি। ব্যারাকপুর সেনা বাহিনীর মধ্যে আইএসআই চর মামলায় সিবিআইকে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। পাশপাশি সিআইডি তার তদন্ত চালিয়ে যাবে। সেনার সঙ্গে সব এজেন্সিকে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, দেশের নিরাপত্তায় সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এর প্রক্ষিতে রাজ্যের আইনজীবী আদালতকে জানান, -‘অভিযোগের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। আমরা যা পেয়েছি তাতে অভিযোগ গুরুতর। যথেষ্ট সিরিয়াস ইস্যু। যথেষ্ট মেরিট আছে। সিআইডি বেশকিছু তথ্য পেয়েছে। আমাদের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে সেনবাহিনীর একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিছু পদক্ষেপ করেছে সেনা। কিন্তু গ্রেফতার নাকি আটক, সেটা বলতে পারব না। এই ঘটনার গভীরতা কতটা সেটা বুঝতে পারছি না।
উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অসম সহ বহু রাজ্যের যোগ আছে। আমরা ছাপাখানা চিহ্নিত করেছি। যেখানে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট সহ জাল নথি ছাপা হয়’।
এরপর বিচারপতি মান্থার বলেন, -‘সিআইডি, সিবিআই ও সেনাকে দেশের নিরাপত্তার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। কোনওভাবে যেন সেনার সঙ্গে সিবিআই বা সিআইডির সংঘাত না হয়। কারণ, এখানে মূল ঘটনা সেনার ভিতরে। সেনা ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি একযোগে তদন্ত করবে’।
এর পাশাপাশি বিচারপতির আরও নির্দেশ, -‘রাজ্যের সিআইডি তাদের হাতে আসা তথ্য, নথি দিয়ে সেনাকে সহযোগিতা করবে। সিবিআই প্রাথমিক অনুসন্ধান করবে। সেনা প্রয়োজনে রিপোর্ট দিতে পারে’। সিবিআই ও সিআইডিকে অগ্রগতির রিপোর্ট দিতে হবে আগামী শুনানিতে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৬ জুলাই।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আইএসআইয়ের চর ঢুকে পড়ছে এই অভিযোগ তুলে বিষ্ণু চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলে তা বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে যায়। সমস্ত অভিযোগ শুনে দ্রুত সিআইডিকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি মান্থা।
এদিন বিচারপতি মান্থা বলেন,-‘ সিআইডি যেমন তদন্ত করছে তেমন চলবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকেও বিষয়টা অনুসন্ধান করবে’। বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, ‘দেশের নিরাপত্তায় সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তদন্ত এজেন্সিদের সহযোগিতা করতে হবে সেনাবাহিনীকে। সিআইডি যে তদন্ত করেছে তাতে অভিযোগের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।’
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ভারতীয় সেনায় লোক ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, এমনই মারাত্মক অভিযোগ আনা হয়েছে এই মামলায়। অভিযোগ, এ রাজ্যের পুলিশ, ভিন রাজ্যের পুলিশ, সেনাবাহিনীতে কর্মরত আধিকারিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যুক্ত আছেন এই দুর্নীতিতে। পুলিশ সহ প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক জাল আবাসিক শংসাপত্র, জাতিগত শংসাপত্র বানিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন মামলাকারী। তাঁর দাবি, থানা ও পুরসভার মাধ্যমে এই দুর্নীতি চলছে।
দুই পাকিস্তানি নাগরিক এই মুহূর্তে ব্যারাকপুরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এই মামলার অভিযোগ সবটা শুনে বিচারপতি এদিন। এজলাসে জানান, -‘ ইস্টার্ন কমান্ড-এর জিওসি এবং মিলিটারি পুলিশকেও মামলার তদন্ত করতে হবে। সেনা ও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলো একযোগে তদন্ত করবে। সিবিআই ও সিআইডির মধ্যে যেন কোনওরকম সংঘাত না হয় সেদিকটা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সিবিআই প্রাথমিক অনুসন্ধান করবে। সেনা প্রয়োজনে রিপোর্ট দিতে পারে। তদন্ত প্রক্রিয়া কতদূর এগোল তা পরবর্তী শুনানিতে সিবিআই ও সিআইডিকে জানাতে হবে’। আগামী ২৬ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।