খোলা হয়েছে ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোলরুম।
নবান্নের নম্বর ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ ও ১০৭০, পর্যটন দফতরের নম্বর ১৮০০-২১২-১৬৫৫ ও ৯০৫১৮৮৮১৭১।
সংশ্লিষ্ট দফতরের সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল।
বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া নির্দেশ।
সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিল দফতরের কর্মীদের প্রস্তত থাকার নির্দেশ।
শুক্রবার পর্যন্ত নিম্ন চাপের সম্ভাবনা।
নৌকা সহ ত্রাণের সামগ্রী প্রস্তুত রাজ্যের।
পুবের কলম প্রতিবেদক: বাংলায় নিম্নচাপ। আর এই নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর সহ দক্ষিণবঙ্গে নদ-নদী তীরবর্তী বহু জমি প্লাবিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে অসুস্থ। তবুও নিজেই কন্ট্রোলরুম সামাল দিচ্ছেন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কয়েকটি জেলায় হতে পারে ভারি থেকে অতিভারী বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে শুক্রবার পর্যন্ত কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে চলবে বৃষ্টি । এদিকে ছাড়া-জলে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন।
আর এর জেরে সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরের ছুটি বাতিল করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেনা প্রস্তুত থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের কাজে যাতে কোনওভাবে গাফিলতি না থাকে সেজন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানের জেরে বিপর্যস্ত প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম। জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়েছে তিস্তা নদীতে। পাশাপাশি জলমগ্ন এরাজ্যের উত্তরবঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কর্মী ও আধিকারিকদের ছুটি বাতিলের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বুধবার রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নেতৃত্বে এক বৈঠকে টেলিফোনে এই নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মী ও আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। পাশাপাশি প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে পুলিশ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে। কন্ট্রোল রুম খোলারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে নদী তীরবর্তী অঞ্চল থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ঝাড়খণ্ড ও সিকিম জল ছাড়লে আমরা ডুবে যাই। সতর্ক থাকতে হবে। যাতে প্রশাসনের দিক থেকে কোনও গাফিলতি না থাকে তা দেখতে হবে। ৩টি দেহ এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি সেনাদেরও দেহ হতে পারে। পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ‘নৌকা-সহ যা যা প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন সবই প্রস্তুত রয়েছে। ত্রাণের সামগ্রী তৈরি আছে। বাকিটা আমরা নজরে রাখছি। পুজোর সময় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। কারণ এই সময় মানুষের একটু রোজগার হয়। এমনিতেই ১০০ দিনের কাজ বন্ধ, যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১০০ দিনের কাজটা চালিয়ে যাচ্ছি। চিন্তা করবেন না, ভয় পাবেন না।’
এদিকে রাজ্যের ৭ জেলা প্রশাসনকে সতর্ক বার্তা দিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের মু’্যমন্ত্রী সপ্তাহে সাতদিন দিনরাত কন্ট্রোলরুম খোলার নির্দেশ দেন। কারও কোনও সমস্যা হলে সেই কন্ট্রোল রুমে জানানোর পরামর্শও দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই সেই অনুযায়ী সমস্ত কাজ করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব।
এদিকে, ক্রমাগত বৃষ্টি এবং ডিভিসি’র ছাড়া জলে দামোদর নদ জলপ্লাবিত করেছে উদয়নারায়ণপুরের ১৪টি গ্রাম সহ একাধিক এলাকা। ইতিমধ্যেই ওই ১৪টি গ্রামের বেশ কিছু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে পায়ের চোটের জন্য বাড়িতে বন্দি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতেই তিনি সবার ছুটি বাতিল করেছেন। রাজ্যে জরুরি পরিস্থিতির কারণে ছুটি বাতিল করা হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক বিভাগগুলিতেও।
এদিকে ডিভিসির জলে রাজ্যের সাত-আটটি জেলাতেও প্লাবনের আশঙ্কা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুরেই নবান্নের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কথায়, ‘আমি পায়ের চোটের জন্য বেরোতে পারছি না। তবে রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়োগ করেছি। তাঁরা বন্যা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। মেদিনীপুর, সবং এবং ঘাটালের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু’টি কন্ট্রোল রুম খোলারও নির্দেশ দিয়েছি।’
রাজ্যবাসীর প্রতিও মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘যাঁরা নীচু এলাকায় বসবাস করেন, তাঁরা দয়া করে বাড়ি থেকে সরকারি শিবিরের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসুন।’ সাত-আটটি জেলায় জরুরি পরিস্থিত তৈরি হতে পারে। মুকুটমণিপুরের বাঁধ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তাই ডিভিসিকে জল ছাড়তে হচ্ছে। জল আরও বাড়বে।’ তবে একই সঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, যে সমস্ত এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল পৌঁছেও গিয়েছে। এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফের দলও পৌঁছেছে।
নবান্নের তরফে ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ ও ১০৭০-এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। পর্যটন দফতরের তরফেও চালু হয়েছে কন্ট্রোলরুম। নম্বর ১৮০০-২১২-১৬৫৫ ও ৯০৫১৮৮৮১৭১ এই দুটি নম্বর চালু হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক জেলার জন্য কন্ট্রোলরুম নম্বর চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী খোদ গোটা বিষয়টির উপর তদারকি করছেন।