এস জে আব্বাস, পূর্ব বর্ধমান: মাদ্রাসা বোর্ডের উচ্চ-মাধ্যমিক সমতুল্ ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্যের মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে চমকে দিল পূর্ব বর্ধমানের কদমপুকুর সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মোজাম্মেল মল্লিক। সে পেয়েছে ৬০০ র মধ্যে ৫৫১।
আট বছর আগে পিতাকে হারিয়ে দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে সে এগিয়ে চলেছে তার লক্ষ্যে। সে জানিয়েছে, মাদ্রাসার হোস্টেল থেকে ফ্রিতে পড়াশুনো করলেও আনুষাঙ্গিক নানান খরচ যুগিয়েছেন কৈথন মাদ্রাসার সম্পাদক তাহের আলী শেখ। তাই সে কৃতজ্ঞ।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে, যদি এই ধরনের সংখ্যালঘু হোস্টেলের সুবিধা না থাকতো, তাহলে তাদের মতো গ্রাম বাংলার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করতে ভীষণ অসুবিধা হত। সাফল্যের জন্য খুঁটিয়ে পড়তে হবে টেক্সট বই। সেই সঙ্গে হাতের লেখার প্রতিও মনোযোগী হতে হবে। ভবিষ্যতে সে আইনজীবী পেশায় আসতে চায়। তার মতে, মেধাবী ছেলেমেয়েরা যদি সংবিধান ও আইনকে লালন না করে বা চর্চা না করে, তাহলে দেশ ক্রমশ অবক্ষয়ের দিকে চলে যাবে।
যেকোনও মূল্যে ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। জানা গেছে, সে পুবের কলম পেপারের একনিষ্ট পাঠক। সকাল হলেই কলম পেপারের অপেক্ষায় থাকে। সে জানিয়েছে, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সত্য খবর কৌশলে চেপে যাওয়া হয়। কিন্তু পুবের কলম পত্রিকা পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সহ ও অন্যান্য উপেক্ষিত জনজাতির সত্য খবরকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত পাঠকের ভরসার জায়গা করে নিয়েছে।
এখন সে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে কিছুটা পড়ে ভাষার ভিতকে মজবুত করে এলএলবি অর্থাৎ আইন নিয়ে পড়তে চাই। তার ইচ্ছা, আলিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার। কিন্তু দারিদ্রতা তাকে এই সুযোগ দেবে কিনা এ নিয়ে সে সংশয়ে রয়েছে।
সে আরও জানিয়েছে, ফাজিল মানেই বেশিরভাগটাই আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা। তবুও এরপর প্রথাগত জেনারেল এডুকেশনে পড়াশোনা করতে কোনও অসুবিধা নেই।
তার মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মোহাম্মদ জাকির উদ্দিন সেখ জানান, ‘প্রথাগত কোনও স্কুলে না পড়া এমন হারিয়ে যেতে বসা মেধাবীকে শিক্ষার অধিকার আইন মোতাবেক বয়স অনুযায়ী একেবারে নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছিলাম। আজ তার ফল মিলেছে। ও পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী। আচার-আচরণও মার্জিত। ওর জন্য আমরা গর্বিত।”