নুরুল ইসলাম খান: ষোল বছরের মহম্মদ আকবর নবম শ্রেণীর ছাত্র। স্থায়ী ঠিকানা, মল্লিক বাজার সিরাজ হোটেলের পাশে ফুটপাত। বাবা মহম্মদ আক্তার দিন মজুরের কাজ করেন। মা শাবানা বেগম ফুটপাতেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ৪ সন্তান সন্ততিকে কষ্ট করে মানুষ করছেন।
স্বামীর সঙ্গী হয়ে অভাব অনটনের সংসার চালাচ্ছেন বহু পরিশ্রম করে। খোলা আকাশের নীচে তাঁদের অভাবের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এর মতো অবস্থা পরিবারের। স্থায়ী কোন ঘর নেই। একটু বৃষ্টি হলেই ঝমাঝম করা জলে ঘরভর্তি হয়ে যায়।
সারারাত জেগে যে রাত রাত কাটাতে হয় সেটাই বলেন, পরিবারের প্রধান আক্তার । পরিবারের কাছে মাথা গোজার ঠাঁই হিসাবে ছাদযুক্ত একটি ঘর তাঁদের কাছে যে অলীক স্বপ্ন, সেটা বলাই ভালো। কিন্তু এই রকম একটি দরিদ্র পরিবারের বড় সন্তান মহম্মদ আকবর একজন দক্ষ ও প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার হতে হতে চায়।
কলকাতার বড় ক্লাবের ভর্তি হয়ে অনুশীলন করছে। সত্যি কথা বলতে কী খেলার প্রতি আকবরের যথেষ্ঠ মেধা ও ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই খোলোয়াড় হওয়ার জন্য।
চালিয়ে যাচ্ছে সে পড়াশোনার পাশাপাশি এই ক্রিকেট খেলা। এই খেলা নিয়ে তাহার স্বপ্ন আকাশ কুসুম। অনুশীলন করছে সে প্রতিদিন। ছেড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার এই স্বপ্নের কথাকে অনেকেই পাত্তা দেবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। পড়শি এবং পাশে বসবাসকারী ধনী লোক বাবুরা আকবরকে দূরছাই করলেও এগিয়ে এসে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ‘আলোর দিশারী’র রহমাতুল্লাহ বা রানা। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় রানা ফুটপাতের সহায় সম্বলহীন শিশুদের নিয়ে বিদ্যালয় চালাচ্ছেন।
খেলাধুলো, পড়ালেখার পাশাপাশি রানা প্রত্যহ তাঁদের মানুষ তৈরির কারিগর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। যাক আকবরের সুপ্তস্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে রানা একধাপ এগিয়ে হবু ক্রিকেটারকে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচিং এ ভর্তি করেছেন। সেই স্বপ্নে বিভোর আকবর অলরাউন্ডার খেলোয়াড় হতে চায়।
হার্দিক প্যাটেল তাহার পছন্দের ক্রিকেটার। সেই স্বপ্নের ভেলায় চড়ে অলরাউন্ডার হওয়ার লক্ষে নিজেকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আকবর। এই বিষয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী আকবর। তাহার চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে রয়েছে অদম্য ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন।
এবং বলল, একদিন নিজেকে একজন খেলোয়াড় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করব। সেই সময়ের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন পরিবার সহ প্রতিবেশীরা।