সুবিদ আবদুল্লাহ্: হাওড়ার সংখ্যালঘুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক-সহ নানা সামাজিক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। জেলার সদর শহরে প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁদের কথা শুনলেন মাইনোরিটি কমিশনের প্রতিনিধিরা। জেলার প্রশাসনিক ভবনের পথের দাবি সভাঘরে বুধবার উপস্থিত হয়েছিলেন মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, ভাইস চেয়ারম্যান মাইকেল সানে ক্যালভার্ট, সদস্য শেহনাজ কাদরী, সতনাম সিং আলুয়ালিয়া, অশোক তুরাকিয়া, জাইদুল ইসলাম খান ও রফিকুল ইসলাম। বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন তরুণজ্যোতি ভিক্ষু। এছাড়াও ছিলেন জেলার স্ব-উদ্যোগের আবাসিক শিক্ষা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ আল-আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। তাঁদের প্রত্যেককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়।
এদিন সকালে প্রতিনিধিরা প্রথমে বসেন জেলার সিভিল সোসাইটির বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক মানুষ আসেন তাঁদের সমাজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে। তাঁদের উদ্দেশ্যে জনাব আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ‘সিভিল সোসাইটির সঙ্গে বসার প্রধান কারণ— সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কী কী সমস্যা আছে, তা জেনে নেওয়া। আপনারা যেভাবে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভাবছেন, কাজের সূত্রে সে সব অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনাদের, তা শোনার জন্যেই এসেছি আমরা। আমরা জেনেছি আপনাদের মধ্যে কেউ স্কুল শিক্ষক, কেউ সমাজকর্মী, কেউ আইন বিশেষজ্ঞ, কেউ বা রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধি। আপনারাই বলতে পারবেন, জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কী অভাব আছে, অভিযোগ আছে।’
এরপর অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন খ্রিস্টান লিডার্স ফোরামের বিশপ শ্রীকান্ত দাস। তিনি জানান, ‘জেলায় কোনও বেরিয়াল গ্রাউন্ড নেই। সদর শহরে একটা মাত্র বেরিয়াল গ্রাউন্ড ছিল, জবরদখল হয়ে আছে সেটি।’ এছাড়া কলকাতার মতো হাওড়াতেও পিস হেভেন তৈরির দাবি ওঠে।
শিখ সমাজের প্রতিনিধির অভিযোগে জানা যায়, প্রশাসনের নাকের ডগায় মদের দোকান গজিয়ে উঠেছে গুরুদুয়ারার সামনে। সংখ্যালঘু শিখ ছাত্র উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাচ্ছে না। বৌদ্ধ ধর্মের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ক্যারিরোডে সরকারি উদ্যোগে বৌদ্ধমূর্তি বসানো হলেও পরে সেটি সরিয়ে আদিবাসী সমাজের এক নেতার মূর্তি স্থাপন করা হয়। বৌদ্ধ প্রতিনিধিদের অভিযোগের পর মূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলেও সংখ্যালঘুদের প্রতি এই অবমাননার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়া জেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সমাজের জন্য শ্মশানের দাবি ওঠে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক মণিরুল ইসলাম ও আনিসুর রহমান দাবি করেন, ‘মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। সব মাদ্রাসা বিজ্ঞান বিভাগ শুরু করতে পারেনি পরিকাঠামোর অভাবে। তা ছাড়া মাদ্রাসা পড়ুয়ারা পোশাক ট্যাব পাচ্ছে না সময় মতো। যে সমস্যাগুলো স্কুলে নেই।’ জেলায় আল-আমীন মিশন ছাড়াও জেলার নানা প্রান্তে একাধিক আবাসিক বালিকা শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তাদের সাহায্য এবং সহযোগিতার আবেদন জানান সমাজকর্মী বাউজুল হোসেন। পাশাপাশি জেলার ওয়াকফ এস্টেটগুলোর পূর্ণ নথি না থাকার কথাও ওঠে।
এ ব্যাপারে জেলার ওয়াকফ বিভাগের কর্মী জিয়াউল হক কমিশনকে জানান, ‘আমতায় একটি বেদখল ওয়াকফ এস্টেট উদ্ধার করে সেখানে নার্সিং কলেজ এবং ল’কলেজ তৈরি করা হচ্ছে। সদরে আরও একটি এস্টেট উদ্ধার করে সেটি স্কুলকে দেওয়া হয়েছে ছাত্রীদের বিজ্ঞান বিভাগ খোলার জন্য।’
দুপুরের পর জেলার মহকুমা এবং ব্লকের প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন, কমিশনের প্রতিনিধিরা। এই সভাটিরও প্রতিনিধিত্ব করেন চেয়ারম্যান ইমরান সাহেব। তার আগে জেলার সংখ্যালঘু উন্নয়ণ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অফিসার মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় সারা বছর ধরে সংখ্যালঘু বিভাগের যে কাজগুলো হয়েছে, তার ভিডিয়ো চিত্র দেখান। এরপর সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধিদের থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।