পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য মাদ্রাজ হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়। ছেলেমেয়েদেরকে দান করে দেওয়া সম্পত্তি বৃদ্ধ বাবা-মা ফেরত চাইতে পারে। যদি দলিলে এসবের উল্লেখ নাও থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী সম্পত্তি ফেরত চাওয়া যাবে।
দাতার কাছ থেকে সম্পত্তি নেওয়ার, পর যদি গ্রহীতা বৃদ্ধ অভিভাবক বা পিতা-মাতার মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার দিকে খেয়াল না রাখে তাহলে সেই সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার দাবি জানাবেন দাতা। সেই সম্পত্তি যদি অন্য কোনওভাবে হস্তান্তর হয় তাহলেও ফেরত চাওয়া যাবে। হাইকোর্ট এ বিষয়ে মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেনস অ্যাক্ট ২০০৭ উল্লেখ করে জানায়, এই আইনের ২৩ ধারায় সিনিয়র সিটিজেনদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনধারণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি এসএম সুব্রমণিয়ম এই রায়ে জানান, এই আইনের ২৩(১) ধারা ক্ষমতা দিয়েছে দানপত্র বাতিল করে দেওয়ার যদি দাতার নূন্যতম প্রয়োজন পূরণের বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে থাকে গ্রহীতা। যদি দলিলে দাতাকে কোনও সুবিধা দেওয়ার বিষয়টির উল্লেখ নাও থাকে তাহলে দান করা সম্পত্তি ফেরত চাইতে পারবেন দাতা। সম্পত্তি হস্তান্তরের পর যদি দাতা মনে করেন গ্রহীতা বা তার পুত্র কন্যারা দাতার সুখ-সুবিধা ও মানবিক প্রয়োজনের শর্তপূরণ করছে না তাহলে সেই সম্পত্তি হস্তান্তর দলিল বাতিল করার অধিকার দিয়েছে এই আইন।
বিচারপতি সুব্রমণিয়ন মনে করেন, সিনিয়র সিটিজেনদের সম্পত্তি হস্তান্তর করা হচ্ছে দানপত্রের মাধ্যমে এটা শুধু ভালবাসা, স্নেহ বা ভক্তির বিষয় নয় এরসঙ্গে যুক্ত রয়েছে শর্ত, সিনিয়র সিটিজেনদের দেখভালের শর্ত। এই শর্ত এড়িয়ে গিয়ে দানে পাওয়া সম্পত্তি ভোগদখল করা যায় না। গ্রহীতার দায়িত্বের উল্লেখ রয়েছে আইনে।
এই আইনের ২৩(১) ধারায় রয়েছে প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা করে বা ভুল বুঝিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে এটা ধরে নেওয়া হবে যদি সিনিয়র সিটিজেনদের দেখভালের ব্যাপারে গাফিলতির প্রশ্ন ওঠে। এইক্ষত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর চুক্তি বা দলিল বাতিল বলে গণ্য করতে পারবে আদালত।
মাদ্রাজ হাইকোর্টে মামলাটি করেন মুহাম্মদ দাইয়ান নামে এক ব্যক্তি। দাইয়ানের মা ছেলেকে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার সময় শর্ত দিয়েছিল বাকি জীবন ছেলে মায়ের দেখাশোনা করবে কিন্তু দাইয়ান মায়ের দেখভাল করছিল না এমনকী তার চিকিৎসার জন্য ওষুধপথ্যের ব্যবস্থা করছিল না। মা বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
জেলা রাজস্ব অথরিটি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে মায়ের অভিযোগ সত্য বলে মনে করে এবং সম্পত্তি হস্তান্তর দলিল বাতিল ঘোষণা করে দেয়। তারপর মুহাম্মদ দাইয়ান সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আসে। হাইকোর্ট জেলা আধিকারিকের রায় বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। অতঃপর বাতিল হয়ে যায় মা-র পক্ষ থেকে ছেলের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর দলিল।