পুবের কলম,ওয়েবডেস্কঃ বাংলা থেকে বহু কর্মী ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান। এদের মধ্যে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা সবথেকে বেশি। নির্মাণ কাজে মুর্শিদাবাদের রাজমিস্ত্রীদের খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে। তবে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন রুটিন খবরে পরিণত হয়েছে। তারপরও পেটের টানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন বাংলার শ্রমিকরা। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকমতো না থাকায় অনেকেরই মৃত্যু অকালে। এমন ঘটনা রুখতে এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার আগ্রহ আগেই প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ফিরিয়ে আনলেই তো হবে না। তাদের কাজ দিতে হবে। সোমবার আলিপুরের ধন ধান্য প্রেক্ষাগৃহে ‘রিয়েল এস্টেট কনভেনশন’-এ নির্মাণ সংস্থাগুলির কাছে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত এই নির্মাণ শ্রমিকরা অধিকাংশই গরিব মুসলিম।
এদিন রিয়েল স্টেট কনভেনশনে মমতা বলেন, ‘কর্মচারীরা আমাদের সম্পদ। মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরের লোকেরা ভাল নির্মাণ শ্রমিক। তাই তাঁদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয় কাজের জন্য। অর্থের জন্য তাঁদের নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁদের নিরাপত্তা নেই। আপনারা একটি অ্যাপ তৈরি করুন। সেখানেই রাজ্যের শ্রমিকদের রাজ্যেই কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। পরিযায়ী শ্রমিকদের আপনারা কাজে লাগান। তথ্যভান্ডার আমরা দিয়ে দেব। স্থানীয় মানুষ কাজ পেলে তাদের যাতায়াত এবং খাবার খরচ কমবে।’
বিনিয়োগের জন্য পশ্চিমবঙ্গে অনুকূল পরিবেশ থাকলেও রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে বলে ওই মঞ্চ থেকেই অভিযোগ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। বলা হচ্ছে, এখানে উন্নয়ন নেই, রয়েছে শুধু সাম্প্রদায়িক হানাহানির ঘটনা। ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে বার বার। কিন্তু এখানে শিল্পের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রয়েছে সুষ্ঠু জমি নীতি। তৈরি হয়েছে ল্যান্ডব্যাঙ্ক।’
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বাংলার উন্নয়ন দেখতে পায় না কিছু মানুষ। রাজ্যের নামে অপ্রচার চালায়। এখানকার ব্যবসায়ীদের এজেন্সি দিয়ে হেনস্থা করা হয়। বাদ যায় না তাঁরû পরিবারও। কিন্তু গত ১২ বছরের রাজ্যের রিয়েল এস্টেটে প্রভুত উন্নতি হয়েছে। সোমবার, ধনধান্য স্টেডিয়ামে রিয়েল এস্টেট কনভেনশন, ২০২৩-এর অনুষ্ঠানে নাম না করে বিজেপি তথা বিরোধীদলগুলির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রথমে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে জঙ্গলসুন্দরী শিল্পতালুকে ৭৫০ কোটি টাকার সিমেন্ট কারখানার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরেই তিনি জানান, গত ১২বছর অর্থাৎ তৃণমূল জমানায় রাজ্যে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে গিয়েছে বাংলা। কেন্দ্রের এজেন্সি রাজ নিয়ে সরব হন মমতা। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে। আমার পরিবারকেও হেনস্থা করা হয়। অথচ আমি কারও থেকে এক পয়সাও নিইনি, এককাপ চাও খায়নি। ’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ, ‘আপনারা ভয় পাবেন না, প্রয়োজনে আদালতের সাহায্য নিন।’
তবে ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে এই ব্যবসায় ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের’ প্রবেশ ঘটেছে বলেও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থ নিয়ে ফ্ল্যাট না দেওয়ার অভিযোগ ওঠা সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ নির্মাণকারী সংস্থাগুলিকেই দিয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য ঘর তৈরি করুন। তাঁরাও কম দামে ঘর কিনতে পারবে। তবে কিছু অসাধু প্রোমোটার আছেন, তাঁরা টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট দেন না। তাই তাঁদের কালো তালিকা ভুক্ত করুন। গরিব মানুষের টাকা নিয়ে চলে যাবে, এ সব সহ্য করা যাবে না।’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলার লগ্নি টানতে ১২ সেপ্টেম্বর তিনি স্পেন যাচ্ছেন।