পুবের কলম প্রতিবেদক: বিগত দু’দশকের বেশি সময় ধরে সাধারণ ডেলিভারির থেকে সিজারের আধিক্য বেড়েছে। সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির পর মায়েদের নানা সমস্যায় ভুগতে হয়। সেই সঙ্গে শিশুদের নানা সমস্যা দেখতে দিচ্ছে। আর এই সমস্যা নিরাময়ে চিকিৎসকদের নাজেহাল অবস্থা। এবার সাধারণ ডেলিভারের আধিক্য ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বাংলায় সিজারের হার দেশীয় গড়েরও বেশি। এই নিরিখে দেশের প্রথম পাঁচ রাজ্যের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই প্রবণতায় রাশ টানতে অপ্রয়োজনীয় সিজার কমাতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে কড়া নির্দেশ দিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। প্রকাশ করা হল সিজার সংক্রান্ত গাইডলাইনও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, স্বাভাবিক প্রসব কমেছে ভয়াবহ হারে। মারাত্মক হারে বেড়েছে অপ্রয়োজনীয় সিজার। বাদ নেই সরকারি হাসপাতালেও। এই প্রবণতা শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বেড়ে চলেছে উদ্বেগজনক ভাবে। সিজারে রাশ টানতে গত ১ এপ্রিল থেকেই বঙ্গে শুরু হয়েছে সিজার অডিট। তাতে উঠে এসেছে, মেডিক্যাল কারণ ছাড়াও সময় বাঁচাতে কিংবা গর্ভবতী মহিলা বা তাঁর পরিবারের ইচ্ছায় দেদার সিজার হচ্ছে। তাই সব মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি জেলা ও মহকুমা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালকে এই অডিট চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে একমাত্র সিজার করা যাবে।
অডিটের বিষয়টি যৌথ ভাবে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ কিংবা সুপারকে তদারক করতে বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশই সরকারি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, অপ্রয়োজনে সিজারের অর্থ হলো, প্রসূতি অথবা গর্ভস্থ সন্তানের শারীরিক কারণে সিজার অপরিহার্য নয়, অথচ স্বাভাবিক প্রসবের জন্যে অপেক্ষা না করে সিজার করা।
এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, পঞ্চম রাষ্ট্রীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে যেখানে গড়ে সরকারি পরিষেবায় ১৪.৩ শতাংশ ও বেসরকারি পরিষেবায় ৪৭.৪ শতাংশ ক্ষেত্রে সিজার হয়, সেখানে এ রাজ্যে এই অনুপাত যথাক্রমে ২২.৯ শতাংশ ও ৮২.৭ শতাংশ! এই অনুপাত রাজ্যে না কমানো গেলে তা প্রসূতি-মৃত্যুই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্যভবন চায়, জেলা ও মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে বড়জোর ৫-১০ শতাংশ সিজার হোক। এই দুই স্তরের হাসপাতালে রেফার হয়ে আসা জটিল প্রসূতি অনেক। মহকুমা স্তরের হাসপাতালে সিজারের হার আরও কম হোক, চাইছে স্বাস্থ্য দফতর।
সব হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা প্রতিটি সিজারের কার্যকারণ বিস্তারিত লিখে সেই রিপোর্ট আপলোড করেন স্বাস্থ্য দফতরে ‘মাতৃ-মা’ পোর্টালে। প্রতি মাসের এই অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে পরবর্তী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে। যে হাসপাতালে ৫০ বা ততোধিক সিজার হয় মাসে, সেই হাসপাতালকে ১৫ দিন অন্তর রিপোর্ট জমা দিতে হবে।