পারিজাত মোল্লা: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে উঠে বিদেশে (সৌদি আরব) বসে বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন বিষয়ক মামলা। এদিন সেই মামলার শুনানিতেই আদালতের নির্দেশ মতো রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জমা দেওয়া হয়েছে রিপোর্ট।
আদালত কে কমিশন জানিয়েছে, -‘তদন্ত করে ইতিমধ্যেই ওই ব্যক্তির মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে’।যদিও কেন্দ্রের আইনজীবী জানিয়েছেন , -‘ এটি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র, ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত’। একই অভিযোগ মামলাকারীর আইনজীবীরও। তিনি জানিয়েছেন , -‘ আগে এই ঘটনার অভিযোগ জানাতে গেলে কেউ অভিযোগ নেয়নি। এছাড়াও ওই ব্যক্তি আদৌ মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন? নাকি অন্য কেউ তার নামে জমা দিয়েছেন, সেটাও পরিষ্কার নয়’। এই বিষয় নিয়ে সিঙ্গেল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, -‘ যে ব্যক্তি এই মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করেছেন তিনি খুবই হালকাভাবে নিয়েছেন বিষয়টিকে। স্ক্রুটিনিও ঠিকভাবে হয়নি।
এই প্রেক্ষিতেই পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে’। বিচারপতি আরও বলেন , কেন্দ্র তদন্তের জন্য আগ্রহী আদালত নির্দেশ দিলে। কমিশনকে অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা কি শুরুতে গুরুত্ব বোঝেনি?’ এখন তদন্তভার কেন্দ্রকে কেন দেওয়া হবে না? এই প্রশ্ন করেছে আদালত। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসারকে মনোনয়ন গ্রহণকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।মিনাখাঁর কুমারজোলর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী মোহারুদ্দিন গাজি গত ৪ জুন সৌদি আরবে যান। আগামী ১৬ জুলাই তাঁর রাজ্যে ফেরার কথা। কিন্তু প্রার্থী অনুপস্থিত হলেও তাঁর মনোনয়নপত্র ঠিক জমা পড়ে যায়। সৌদি আরবে থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে মিনাখাঁয় মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মোহারুদ্দিন, এই প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা।
এ নিয়ে টুইট করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সিপিএম। মামলাকারীর আইনজীবীরা অভিযোগ করেন,-‘ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক এবং পঞ্চায়েতের রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সম্ভব ছিল না’। এর পর কত তারিখ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়ল, কবে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তাঁর নাম আপলোড হল, এই সংক্রান্ত তথ্য হাই কোর্টে জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। পাশাপাশি অভিবাসন দফতরকেও এই মামলায় পার্টি করার নির্দেশও দেওয়া হয়। এর পর ওই তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
এদিন এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী জানান, -‘ এটা একটি সংগঠিত অপরাধ। দেশের বাইরে রয়েছেন প্রার্থী। তদন্তের স্বার্থে সিবিআই ইন্টারপোলের সাহায্য চাইতে পারে। এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খোঁজার জন্য তদন্ত জরুরি’। এর পর বিচারপতি নির্দেশ দেন -‘ ওই প্রার্থীর মনোনয়ন পর্বের যাবতীয় নথি সংরক্ষণ করতে হবে’। তাছাড়া, দায়িত্বপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ শুরু করার নির্দেশ দেন। কোন সংস্থা তদন্ত করবে পরবর্তী সময়ে আদালত সেই নির্দেশ দেবে। আগামী ১৯ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।