ওয়াহিদ রেজা, লালগোলা: মা বিড়ি বাঁধেন, বাবা মসজিদের ইমাম। সেই ঘর থেকে মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে সম্ভব্য পঞ্চম স্থান দখল করে তাক লাগিয়ে দিল লালগোলা আই সি আর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সাদিয়া খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭০। মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার সাফল্যে খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে, স্থানীয় বাসিন্দারা। এই সাদিয়া আগামী দিনে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। আথিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বিড়ি শ্রমিক মায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয় সাদিয়াকে।
লালগোলা থানার কুলগাছি বটতলা এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া খাতুন। পরিবারে ছয় ভাই বোনের পঞ্চম সাদিয়া। ঘরে অভাব তাই খুব বেশি পড়াশোনা করতে পারেনি সাদিয়ার আগের চার ভাই বোন। বাবা মাকে সাহায্য করতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন রাজ্যে কাজ করে তারা।
অবশ্য অভাব ছুঁতে পারেনি সাদিয়াকে, অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর মানসিক জোর কে সম্বল করে বিনা টিউশনে বাংলায় ৯৫, ইংরেজিতে ৯২, গণিতে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ইতিহাসে ৯৮, ভূগোলে ৯৫ এবং ইসলাম পরিচয়ে ৯৯ নম্বর পেতে সক্ষম হয় সে।
পড়াশুনার পাশাপাশি আবৃত্তি, গজল, ছবি আঁকা, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা এবং ইউথ পার্লামেন্টে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের এই মেয়েটির। দারিদ্রতার কারণে বাবা মা দু’বেলা ভালো খাবার কিংবা পোশাক দিতে না পারলেও সাদিয়ার কোনও দিন কোনও রকম অভিযোগ ছিল না, একথা বলতে বলতে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে সাদিয়ার মা সায়রা বানুর।
তিনি বলেন, ‘মেয়ের পড়াশোনা ছিল ধ্যান জ্ঞান। স্কুল থেকে ফিরে বই নিয়ে বসে যেত, গভীর রাত পর্যন্ত চলত পড়াশোনা। আজ আমরা মেয়ের সাফল্যে সবাই খুশি।’ পড়াশোনা চাপে অপুষ্টি জনিত কারনে মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তো সাদিয়া। তাই বলে কোনদিনই অমনোযোগী হয়নি পড়াশোনায়। আবার সৃষ্টি সুখের উল্লাসে গেয়ে উঠেছে গজল, রং তুলি নিয়ে বসে পড়েছে ছবি আঁকতে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ইউথ পার্লামেন্টে সফল হয়ে বারবার মুখ উজ্জ্বল করেছে ইলিমপুর- চমকপুর – রামচন্দ্রপুর তিনটি গ্রামের নাম নিয়ে গড়ে ওঠা আই সি আর হাই মাদ্রাসার। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা বিশিষ্ট চিত্র শিল্পী মিজানুর খান বলেন, ‘মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয় এর নাম উজ্জ্বল করেছে বটে। কিন্তু এর আগে শুধু মাদ্রাসা নয় অন্তঃ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেরা শিরোপা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে সাদিয়া। ওর সাফল্যের স্বাদ আমরা আগেও পেয়েছি, আগামী দিনেও পাব সে আশা রাখি।’
আর্থিক কারণে চার ছেলে মেয়েকে খুব বেশি পড়াতে পারেননি ইমাম সাহেব। এতদিন সেই আক্ষেপ বুকে করে বেড়িয়েছেন সাদিয়ার ইমাম আব্বা মুহাম্মদ অলিউল্লাহ। স্বাভাবিকভাবে মেয়ের এত বড় সাফল্যে খুশি তিনি। মেয়ের ফল জানার পর তিনি বলেন, ‘আপনারা দোওয়া করবেন ও যেন আরো সফল হয়। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে।’