পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: হাওড়ার সাঁতরাগাছি রেলওয়ে ওভারব্রিজের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল রাত ১২টা থেকে চলছে সংস্কারের কাজ। এই কাজের জন্য আগামী প্রায় দেড়মাস এই সেতু এবং শহরকে কতটা যানজটমুক্ত রাখা যায় সেই পরীক্ষা এখন সিটি পুলিশের। সেতুর সংস্কারের জন্য আগামী প্রায় দেড় মাস যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে হাওড়ার গুরুত্বপূর্ণ সাঁতরাগাছি সেতুতে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে সেতু মেরামতের কাজ। গোটা ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় মাস চলবে এই কাজ। সেই কারণে ওই সময়ের মধ্যে সাঁতরাগাছি সেতুর উপর দিয়ে আংশিক বন্ধ রাখা হচ্ছে যান চলাচল। সেতু মেরামতির জন্যই এই সিদ্ধান্ত। রাত এগারোটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ব্রিজের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। ভোর ৫টার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সেতু দিয়ে শুধুমাত্র যাত্রীবাহী গাড়ি ( বাস, প্রাইভেট বাস ), বাইক, স্কুটার, অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করতে পারবে।
যে কয়দিন ব্রিজের মেরামতির কাজ চলবে সেই কয়দিন কোনও মালবাহী গাড়ি চলতে দেওয়া হবেনা ব্রিজের উপর দিয়ে। ১৯ নভেম্বর থেকে হাওড়ার সাঁতরাগাছি রেলওয়ে ব্রিজের এই মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজের জন্য হাওড়া শহরে ট্রাফিক ডাইভারসন করা হচ্ছে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে আংশিক রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে৷ এর জন্য রাত ১১টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত যতদিন কাজ চলবে ততদিন সাঁতরাগাছি রেলওয়ে ব্রিজ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। সেই সময় ওই ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্ভব হবে না। এছাড়া ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছোট গাড়ি, প্যাসেঞ্জার গাড়ি, বাস, অ্যাম্বুলেন্স, সহ সমস্ত গাড়ি ( মালবাহী গাড়ি বাদে অন্য গাড়ি ) সাঁতরাগাছি ব্রিজ দিয়ে যেতে পারবে। যাত্রীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় এবং সহজে যাতে গাড়ি যাতায়াত করতে পারে সেইজন্য সর্বক্ষণ নজরদারি রাখা হচ্ছে। মালবাহী গাড়ি পাঠানো হবে আন্দুল রোড দিয়ে। আন্দুল দিয়ে সেই গাড়ি আলমপুর হয়ে ধুলাগোড় হয়ে পড়বে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে।
মাইতিপাড়া দিয়ে যে মালবাহী গাড়ি আসত সেই গাড়ি এখন নিবেদিতা সেতু দিয়ে টালা ব্রিজ হয়ে কলকাতার বন্দর বা অন্যান্য এলাকায় চলে যাবে। অন্য আর একটি বিকল্প রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি ছোট গাড়ি, বাস, অ্যাম্বুলেন্স প্রভৃতি গাড়ির জন্য কিছু গাড়ি যারা কলকাতার দিকে যাবে সেগুলো বেলেপোল হ্যাংস্যাং ক্রসিং হয়ে শানপুর ক্রসিং দিয়ে হাওড়া আমতা রোড দিয়ে শলপের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। ওখান দিয়ে জাতীয় সড়কে যাওয়া যাবে। এই রাস্তা দিয়ে মালবাহী গাড়ি যাবেনা। আর যারা উল্টো দিক থেকে আসবে তাদের সলপ ক্রসিং দিয়ে হাওড়া আমতা রোড দিয়ে হ্যাংস্যাং ক্রসিং ধরতে হবে।
হাওড়ার অভ্যন্তরীণ মালবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা নোটিফিকেশন করা হয়েছে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মালবাহী গাড়ি যখন থেকে চলাচল করবে তখন থেকে অটো, টোটো চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সাঁতরাগাছি ব্রিজ দিয়ে হাওড়া বা কলকাতার দিকে যাতায়াতকারী গাড়িগুলো কিভাবে যাতায়াত করবে সেটা ট্রাফিকের চাপ দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সাধারণত এক্সাইড দিয়ে প্রথমে গাড়ি পার করা হবে। পরে উল্টো দিক থেকে পার করা হবে।
যাতে সুষ্ঠুভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্য অনেকদিন ধরেই হোমওয়ার্ক করা হয়েছিল পুলিশের তরফ থেকে। যাতে সকল পুলিশ কমিশনারেট এবং এজেন্সির মধ্যে সমন্বয় থাকে তার জন্য চন্দননগর কমিশনারেট, হাওড়া গ্রামীণ, হুগলি গ্রামীণ, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট, বিধাননগর পুলিশ কমশনারেট সকলের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করা হয়েছিল। যাতে খুব বেশি অসুবিধা না হয়। এই ব্রিজ হাওড়ার লাইফ লাইন। ব্রিজটি সারানোর জন্য অতিরিক্ত পুলিশ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। অতিরিক্ত অস্থায়ী হোমগার্ড রাখার অনুমোদন মিলেছে। এই জন্য প্রায় ৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকছে। মানুষের যাতে অসুবিধা না হয় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে বলে প্রশাসনের দাবি।
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চেষ্টা করা হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজ শেষ করা যায়। হাওড়ার সমস্ত বিকল্প রাস্তা খোলা আছে। কয়েক দিন কাজের সময় কি পরিস্থিতি হয় তা দেখে কোথায় গাড়ির চাপ আছে তা দেখে সেই অন্যযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই কাজের জন্য যা যা কাজের প্রয়োজন তা করা হয়েছে। কোনওভাবে যাতে ট্রাফিকের বাধা সৃষ্টি না হয় তারজন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে কাজ চলবে। এর মধ্যে যদি কোনও সমস্যা হয় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেখানে প্রয়োজন হতে পারে সেইরকম স্ট্যাটেজিক পয়েন্টে ভ্যানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে যদি গাড়ির প্রেসার বেড়ে যায় তাহলে টালা ব্রিজ দিয়ে নিবেদিতা সেতু হয়ে গাড়ি পাঠানো হতে পারে। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অ্যাম্বুলেন্স যাতে আগে যেতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা হবে। মানুষকে সচেতন করতে কিছু কিছু জায়গায় সাইন এজ দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ দেখলেই বুঝতে পারে সেইজন্য বিভিন্ন জায়গায় সাইন এজ টাঙানো হয়েছে। আরও সাইন এজ টাঙানো হচ্ছে। প্রপার ‘সাইন এজ’ টাঙানো হবে কোনও সমস্যা যাতে না হয়।
রুট যা হচ্ছেঃ
১) সকল ছোট গাড়ি, বাস, ইমারজেন্সি ছোট গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স যাবে দ্বিতীয় হুগলি সেতু টোলপ্লাজা – হ্যাংসাঙ ক্রসিং – ড্রেনেজ ক্যানেল রোড- শানপুর ক্রসিং – হাওড়া আমতা রোড – সলপ ক্রসিং – এন এইচ ১৬।
২) এছাড়াও দ্বিতীয় হুগলি সেতু টোল প্লাজা – হাওড়া আন্দুল রোড- মৌড়ীগ্রাম রেল ব্রিজ – আলমপুর – ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক।
৩) ১৯ তারিখ সকাল ৮টা থেকে ১২টা বিকেল ৪টে থেকে রাত ১০টা এবং রাত ১১টা থেকে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত আন্দুল রোডে টোটো চলাচল বন্ধ।
৪) সব ধরনের গাড়ি নিবরা ক্রসিং, গরফা ক্রসিং এবং জানা গেট ক্রসিংয়ে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত প্রতিদিন বন্ধ থাকবে।
৫) বকুলতলা বাসস্ট্যান্ড ১৯ তারিখ থেকে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে মৌরীগ্রামে।