নিজস্ব প্রতিবেদক: কথায় বলে সাবধানের মার নেই। মোদি সরকারের ‘আড়িপাতা’ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এবং গোপনীয় কথাবার্তা ও তথ্য ফাঁস রুখতে রাজ্যের আমলাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পরিবর্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আইফোন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের ওই পরামর্শের পরেই একাধিক দফতরের সচিব থেকে শুরু করে পদস্থ আমলারা আইফোন ব্যবহার শুরু করেছেন। রাজ্য প্রশাসনের এক আমলার কথায়, ‘আপাতত জেলাশাসক থেকে শুরু নীতি-নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা আমলারাই আইফোন ব্যবহার করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও আইফোন ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই যে সব রাজ্যে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের সরকার রয়েছে, সেখানে ফোনেআড়ি পেতে গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ইজরায়েলি সংস্থার তৈরি পেগাসাস ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতা সহ বিজেপি বিরোধী সাংবাদিক, শিল্পপতি ও বিদ্ধজনদের গতিবিধির উপরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্ত বিভিন্ন গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থা নজরদারি চালাচ্ছে বলে অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। আড়িপাতা নিয়ে মোদি সরকারকে বিঁধেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এমনকী নিজের মোবাইল ফোনে সেলোটেপও লাগিয়েছিলেন।
মোদি সরকারের আড়িপাতা থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে তা নিয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের তুলনায় আইফোন অনেক বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ। আইফোন হ্যাক করে তথ্য হাতানো সহজ নয়। ওই মতামতের পরেই ইকো পার্কে বিজয়া সম্মিলনীর ফাঁকে আমলাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পরিবর্তে আইফোন ব্যবহারের পরামর্শ দেন মমতা। গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা আইফোনে বলার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নথি চালাচালির ক্ষেত্রেও আইফোন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেক আমলারই আইফোন রযেছে। যদিও সেই ফোন তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শের পরেই অনেক আমলা আইফোন কেনার দিকে ঝুঁকেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমলা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শকে নির্দেশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে আইফোন কেনার জন্য আমলাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ করা হচ্ছে না। কেননা, ওই বিশেষ বরাদ্দ করা হলেই বিরোধী নেতারা ও গদি মিডিয়ারা অকারণে সমালোচনায় মেতে উঠবে। এমনকী কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলার চেষ্টা চলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে আপাতত ব্যক্তিগত খরচেই ওই ফোন কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আধিকারিকদের প্রশাসনিক স্তরেই সরকারি কাজকর্মে ব্যবহারের জন্য আইফোন দেওয়া হতে পারে।