পুবের কলম প্রতিবেদক: ভিন রাজ্যে কাজ করতে গেলেও, কোনও কারণে চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিলে, এবার আর দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। কারণ, রাজ্যের বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরাও এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সহায়তায় বিমার মাধ্যমে সুবিধা পাবেন। বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্যের বাজেট ঘোষণায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এমনই জানিয়েছেন অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পরিযায়ী শ্রমিকদের এই সুবিধা দেওয়ার জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব এই বাজেটে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এর ফলে ২৮ লক্ষেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক উপকৃত হবেন।
সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছে যাওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। ফলে, এ রাজ্যের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের যে প্রচেষ্টা জারি রয়েছে, ফের তারই প্রতিফলন দেখা গেল ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্যের বাজেট ঘোষণায়।
অন্যান্য বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্যেও এবারের বাজেটে রাখা হল আরও কিছু নতুন সুবিধার ঘোষণা।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ দিন বাজেট ঘোষণায় জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১৯৮৫১.৭৩ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল ১৮২৬২.৬২ কোটি। অর্থাৎ, এই বছর রাজ্য বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ১,৫৮৯.১১ কোটি টাকা বেশি ব্যয় বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণায়।
তবে, শুধুমাত্র এমন বরাদ্দ বৃদ্ধির ঘোষণাও নয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এবারের বাজেট ঘোষণায় অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের অনন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য লাভ করেছি।
আমি রাজ্যের বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা, যারা কর্মসাথী পরিযায়ী শ্রমিক পোর্টাল-এ নথিভুক্ত আছেন, তাঁদেরও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি। এই প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের কর্মস্থলের হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সহায়তায় বিমার মাধ্যমে সুবিধা পাবেন।’ তিনি বলেন, ‘এই খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২৮ লক্ষেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক এতে উপকৃত হবেন।’
এ দিন বাজেট ঘোষণায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এই বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী এমনই বলা হয়েছে: রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিশেষত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগ এবং চোখ, ইএনটি পরিষেবা, ওরাল হেলথকেয়ার, বয়স্ক এবং মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে সু-স্বাস্থ্য কেন্দ্র (স্বাস্থ্য ও সুস্থতাজনিত কেন্দ্র) স্থাপন করা হয়েছে।
অভূতপূর্ব স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ২.৪৫ কোটি পরিবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় মোট ২,৭৪৯টি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শুরুর সময় থেকে এই প্রকল্পের অধীনে ৬৫ লক্ষ উপভোক্তা পরিষেবা গ্রহণ করেছেন, যার জন্য মোট ৮,৬০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে ২,০০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। প্রতিদিন আনুমানিক ৬,০০০ রোগী এই পরিষেবা গ্রহণ করছেন।
রাজ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু এবং নবজাতকের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার বিষয়গুলি উল্লেখের পাশাপাশি এ দিন বাজেট ঘোষণায় স্বাস্থ্য দফতরের সাফল্যের তালিকায় যেমন স্থান পেয়েছে চোখের আলো, শিশুসাথী, স্বাস্থ্য ইঙ্গিত প্রকল্প, তেমনই এই তালিকায় রয়েছে মা ও শিশুর চিকিৎসা, ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান, ন্যায্যমূল্যের পরীক্ষা কেন্দ্র এবং ডায়ালিসিস কেন্দ্রের মতো বিষয়গুলিও।
স্বাস্থ্য পরিষেবায় আয়ুষ চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও এ দিন বাজেট ঘোষণায় জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি জানানো হয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ, ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের কথা। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হার্ট, স্ট্রোক, ক্যানসারের চিকিৎসার পাশাপাশি এ সব ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়গুলিও উল্লেখ করা হয়েছে এ দিন বাজেট ঘোষণায়।