পুবের কলম প্রতিবেদকঃ আরও ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করল রাজভবন। আর এই নিয়ে ফের বিতর্কের মুখে পড়লেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালগুলিকে উপাচার্য নিয়োগের নির্দেশিকা পাঠায় রাজভবন এর আগেও রাজ্যের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। আর এই নিয়ে তৈরি হয়েছে ফের বিতর্ক।
রাজভবনের নির্দেশিকার এক্তিয়ার জানতে রাজভবনকে কড়া চিঠি দিল রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর। প্রশ্ন তুলে শিক্ষা দফতর জানতে চেয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনি ‘এক্তিয়ার’ কতটা রাজ্যপালের।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাজভবনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয় উপাচার্যের নির্দেশই চুড়ান্ত। এদিকে এই নির্দেশ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যাতে গ্রহণ না করে, এই মর্মে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিঠিও দেয় উচ্চশিক্ষা দফতর। জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে লেখা রয়েছে রাজ্যপাল কোন- কোনও বিষয়ে পদক্ষেপ করবেন। তা রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর মারফত হতে হবে। কিন্তু, এক্ষেত্রে আইন মানা হচ্ছে না। তাই গত ২ সেপ্টেম্বরের রাজভবনের নির্দেশ যাতে কোনওভাবে কার্যকরী করা না হয়, সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে জানায় শিক্ষা দফতর।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তথা রাজ্যে রাজ্যপালের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উদ্দেশ্যে। তাতে বলা হয়, আচার্যের পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সার্বভৌম অধিকর্তা হলেন উপাচার্য। তাঁর অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা, তাঁরই নির্দেশ মেনে কাজ করবেন। সরকার তাঁদের নির্দেশ দিতেই পারে, কিন্তু সেই নির্দেশ তাঁরা মানতে বাধ্য নন।
এই নিয়ে এদিন রাজ্যপালের সচিবালয়কে কড়া চিঠি পাঠিয়েছে উচ্চ শিক্ষা দফতর। রাজভবনকে পাঠানো শিক্ষা দফতরের নির্দেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে যে কোনও বার্তা উচ্চশিক্ষা দফতর মারফত পাঠাতে হবে। এটাই রয়েছে আইনে। আইন অনুযায়ী, এটা এখনও বৈধ। কিন্তু রাজভবন এই নির্দেশ মানছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কোনও অধিকার দেয়নি আচার্যকে এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করার। শিক্ষা দফতর এও জানিয়েছে, ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়েছে সাধারণের স্বার্থে। এটা কোনও বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসনকে আঘাত করেনি। তাই ২ সেপ্টেম্বরের নির্দেশিকা যেন প্রত্যাহার করে রাজভবন।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একের পর এক নির্দেশিকা পাঠানো ঘিরে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে দেউলিয়া করে দিচ্ছেন রাজ্যপাল। জেমস বন্ড মার্কা আচরণ করছেন আচার্য। এ রাজ্যের রাজ্যপালকে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি যেন কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার শ্রেষ্ঠ বিদূষক।
এদিন ব্রাত্য বসু আরও বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরে আমাদের মনে হচ্ছিল রাজ্যপাল সিস্টেম বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। তাঁর আচরণ সেটাকে সিলমোহর দিচ্ছে। রাজ্য সরকারকে বাইপাশ করে ক’নও উপাচার্য নিয়োগ করছেন। আবার কখনও বিতাড়িত করছেন। তালিবানি শাসন চালাচ্ছেন।’
প্রেসিডেন্সি, বর্ধমান-সহ রাজ্যের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা অসুবিধায় পড়ছেন বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষাবিদরা। তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সরাসরি নিজেই তৎপরতা দেখান। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজকুমার কোঠারিকে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে দেবব্রত বসু, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে গৌতম চক্রবর্তী, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ ভবনের তরফে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির মাথায় বসানো হয়েছে তপন চক্রবর্তীকে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারিজ সায়েন্সেসের দায়িত্ব পেয়েছেন শ্যামসুন্দর জানা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য তথা প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে। অর্থাৎ তিনি একই সঙ্গে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
শনিবারই রাজভবনের তরফে একটি সার্কুলার জারি করে বলা হয়েছিল, আচার্যের পর উপাচার্যই হবেন যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বেসর্বা। তাঁর অধস্তন, যেমন সহ-উপাচার্য বা রেজিস্ট্রারদের তাঁরই নির্দেশ পালন করে চলতে হবে। সরকার তাঁদের নির্দেশ দিলেও তা তাঁরা মানতে বাধ্য নন। সে ক্ষেত্রে উপাচার্য মান্যতা দিলে তবেই সরকারি নির্দেশ পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্তারা। রাজভবনের ওই নির্দেশ নিয়ে আবার বিতর্ক শুরু হয়। রাজ্যের শিক্ষাবিদদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।