পুবের কলম প্রতিবেদক: “রাস্তা চলেছে যত অজগর সাপ/ পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ ধাপ” রবীন্দ্রনাথের কবিতার হাত ধরেই শৈশবে আমাদের প্রথম ট্রামের সঙ্গে পরিচয়ের শুরু। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই শহর কলকাতার বুকেই ১৮৭৩ সালে এশিয়ার প্রাচীনতম এবং ভারতের প্রথম ট্রাম পরিষেবা চালু হয়েছিল তিলোত্তমা কলকাতাতেই। ১৮৮০ সালে খোদ লন্ডনে শুরু হয়েছিল দ্য ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি। তবে আজ আর তার কোন অস্তিত্ব নেই। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয়। শুক্রবার তার ১৫০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছিল একগুচ্ছ অনুষ্ঠানের।
এক কামরার ট্রাম, ঘোড়ায় টানা ট্রাম থেকে হাল আমলের শীততপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাম।একসময় হাওড়াব্রিজ দিয়েও চলতো ট্রাম। শিবপুর ট্রামডিপো নামটি আজও তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। দেড়শো বছরের ট্রামযাত্রার পুরো বিবর্তনটাই তুলে ধরা হয়েছে । ট্রামের ১৫০ তম জন্মদিনে ধর্মতলায় হাজির ছিলেন বহু বিশিষ্ট জনেরা তাঁদের মধ্যে , রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী,ট্রাম কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেনবীর সিং কাপুর, গায়ক অঞ্জন দত্ত, অভিনেতা মনোজ মিত্র।
গায়ক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের গাওয়া ট্রামের উপর একটি থিম সং প্রকাশ করা হয়। এইদিন বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ট্রামের প্রাক্তন কন্ডাক্টর-চালক রবার্তো দি আন্দ্রেয়া ও তার বন্ধু টনি। সেই সাবেক ট্রাম কন্ডাকটর রবার্তোকে দেখতে ছিল উৎসাহীদের ভিড়। রীতিমত কেক কেটে শুরু হয় জন্মদিনের অনুষ্ঠান। ২২ জন বিদেশী অথিতি উপস্থিত ছিলেন।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2023/02/index3.jpg)
ছবি: রমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
এই পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোশিয়েশান, ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন। ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার, গড়িয়াহাট এই ছিল এইদিনের “চৈতালি” ট্রামযাত্রার রুট। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইদিনের ট্রাম যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। এসপ্ল্যানেড থেকে শুরু হয়ে শ্যামবাজার পর্যন্ত এই রুটটি ফের চালু হতে পারে। এছাড়াও পর্যটকদের জন্য এই পরিবেশবান্ধব যানটিকে নিয়ে চালু হতে পারে একটি এসপ্ল্যানেড থেকে ময়দান ঘুরে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত হতে পারে একটি রুট।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2023/02/index-76.jpg)
ছবি: রমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
দেড়শো বছর আগে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলেছিল শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। প্রায় চার কিলোমিটার পথ জুড়ে প্রথম চলেছিল ট্রাম। ট্রাম মানেই বাঙালির একরাশ আবেগ আর নস্টালজিয়া। তবে শহর যত আধুনিক হয়েছে, পরিসরে বেড়েছে ততই ব্রাত্য হয়েছে ট্রাম। এখন যেন তার নিজের সঙ্গেই টিকে থাকার লড়াই। তাই ১৫০ তম জন্মদিনেও যেন বিষাদের ছোঁয়া তার গোটা শরীর জুড়ে। এখন মাত্র দুটি রুটে সে টিমটিম করে টিকে আছে। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে কেবল কলকাতা আর মেলবোর্ন শহরেই ট্রাম একটানা চলেছে কোনো বিরতি ছাড়াই।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)