পুবের কলম প্রতিবেদকঃ পয়গম্বর হযরত মহম্মদকে নিয়ে কটূক্তি করা নূপুর শর্মা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। সোমবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের আয়োজিত বিশেষ কনক্লেভে নূপুর প্রসঙ্গে তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘আগুন নিয়ে খেলা ঠিক নয়। পুরো বিষয়টি আসলে বিজেপির ষড়যন্ত্র। ধর্মের ভিত্তিতে মন্তব্য করে যিনি দেশে আগুন ছড়িয়েছেন তাকে এখনও গ্রেফতার করা হল না কেন?’ জাতপাত কিংবা ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতিতে যে তৃণমূল বিশ্বাসী নয়, তাও এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন সর্ভবারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিশেষ কনক্লেভে নূপুর শর্মা থেকে শুরু করে পরবর্তী লোকসভা ভোট, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার বিক্ষুব্ধদের নিয়ে বিজেপির নতুন সরকার গঠন থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবিদার নিয়ে খোলামেলাই কথা বলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দেশজুড়ে যেভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং হানাহানি বেড়ে চলেছে সে প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকাকে তুলোধনা করেন তিনি। বিজেপির সাসপেন্ডেড মুখপাত্র নূপুর শর্মার প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে সঞ্চালককে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের মানুষের নাম এড়িয়ে চলাই ভাল।
এটা একটা ষড়যন্ত্র এবং বিজেপির ঘৃণার রাজনীতি। এবারেই প্রথম নয়। এর আগেও এই ভদ্রমহিলা একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। বাংলাদেশের একটি ফেক ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে সেটিকে পশ্চিমবঙ্গের বলে দাবি করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের বদনাম করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময়েও তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
এবারেও এফআইআর হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’এর পরেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, ‘জাতপাত আর ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে দেশে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। কিন্তু আগুন নিয়ে খেলা ঠিক নয়। কেন জাতপাতের রাজনীতি হবে? তৃণমূল কংগ্রেস কখনও ধর্ম, জাতপাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা, হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন সবার। সমস্ত ধর্মের।’ এদিন সম্প্রতি তাঁকে এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করে গ্রেফতার হওয়া ইউটিউবার রোদ্দুর রায়ের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন সঞ্চালক। তার জবাবে মমতা বলেন, ‘শুধু মাত্র আমার বিরুদ্ধে গালাগালি দেওয়ার জন্য নয় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ জমা পড়েছিল। বাংলায় কাউকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গ্রেফতার করা হয় না।’
সম্প্রতি রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যের পদে রাজ্যপালকে সরিয়ে তাঁকে বসানোর সিদ্ধান্ত সম্পর্কেও এদিন মুখ খুলেছেন মমতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন ওই রাজ্যে একই বিল পাশ করেছিলেন। মহারাষ্ট্র সহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার একই বিল পাশ করেছে। মোদি করলে ভুল নয়, আর আমরা করলেই ভুল। তাছাড়া যিনি বর্তমানে রাজ্যপালের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি প্রতিদিন রাজভবনে বসে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখে চলেছেন। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করছেন। নিজেদের সুপার পাওয়ার হিসেবে মনে করছেন। অতীতে কখনও এই ধরনের সরকার দেখিনি।’
মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন মহা বিকাশ আগাড়ি জোট সরকারকে যেভাবে ক্ষমতা থেকে হঠানো হয়েছে, তা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। অর্থশক্তি আর কেন্দ্রীয় এজেন্সির জোরে একটার পর একটা সরকারকে ফেলে দিচ্ছে। শুধু টাকা নয়, শিবসেনার বাগী বিধায়কদের আরও অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে।’