পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ গত মাসেই আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবান। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আমেরিকা। আফগান ভূমিতে এই অস্থির পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাংবাদিকতাতেও। এমনটাই নিজেদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ‘ক্ল্যারিওন ইন্ডিয়া’ নামে একটি ওয়েব পোর্টাল। নিউজ পোর্টালটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে– সোশ্যাল মিডিয়া এমনকী ঐতিহ্যবাহী নিউজ মিডিয়া দু’ক্ষেত্রেই অসত্য তথ্য– ভুয়ো খবর ও অপপ্রচারে ভরে গিয়েছে। সেখানে অজস্র ভুয়ো ও পূর্বে প্রচারিত বক্তব্যগুলিকে নতুন করে খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে– সেগুলিকে পুনর্জাগরিত করা হচ্ছে। আর সেগুলিকেই নতুন তথ্য ও খবর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে– সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের বর্তমান চলমান পরিস্থিতির প্রাসঙ্গিকতাকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। মূল ধারার সংবাদমাধ্যমগুলিও এই অসত্য তথ্য পরিবেশনে শামিল হয়েছে। বেদনাদায়ক হলেও মোটেই আশ্চর্যজনক নয় যে, এক শ্রেণির মূল স্রোতে থাকা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও এই মিথ্যা তথ্যের বেসাতি করার ক্ষেত্রে সামনের সারিতেই রয়েছে।
৬ আগস্ট সোমবার খবর ছড়িয়ে পড়ে যে– তালিবান আফগানিস্তানের পাঞ্জশির প্রদেশ দখল করে নিয়েছে। পাঞ্জশিরের প্রতিরোধকারী শক্তির বিরুদ্ধে তালিবানের এই লড়াইয়ে তালিবানকে সম্পূর্ণ সাহায্য করেছে পাকিস্তান। তালিবানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানও হামলা চালিয়েছে পাঞ্জশিরের প্রতিরোধকারী শক্তিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ভুয়ো খবর পরিবেশনে সিদ্ধহস্ত বলে পরিচিত ‘রিপাবলিক টিভি’ একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে দাবি করতে থাকে যে– তাদের কাছে একটি এক্সক্লুসিভ ফুটেজ রয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে– পাঞ্জশিরের উপর পাকিস্তানি যুদ্ধ বিমান উড়ছে ও হামলা চালাচ্ছে। এই একই ভিডিয়ো সম্প্রচার করে ‘টাইমস নাও’– ‘নবভারত’ ও ‘জি হিন্দুস্তান’। তারা এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে– পাঞ্জশিরে হামলায় পাকিস্তানের যোগও রয়েছে। কোনও এক ‘হস্তি টিভি’ থেকে নাকি এই ফুটেজটি সংগ্রহ করা হয়েছিল। যদিও আসল তথ্য ফাঁস করেছেন মুহাম্মদ জুবের নামে এক সাংবাদিক। জুবের আবার একটি সত্য অনুসন্ধানকারী ওয়েবসাইটের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতাও। জুবের জানান– ভিডিয়োটি মোটেই পাঞ্জশিরের ঘটনাস্থল থেকে তুলে আনা হয়নি– সেটি কোনও আসল ফুটেজই নয়। এটি একটি ভিডিয়ো গেমের ফুটেজ। অর্থাৎ– পাঞ্জশিরে হামলায় ‘পাক-যোগের’ যে ফুটেজটি মিডিয়াগুলিতে দেখানো হয়েছে– সেটি একটি ভিডিয়ো গেম থেকে নেওয়া। রিপাবলিক টিভি যে ভিডিয়ো গেম থেকে ফুটেজটি নিয়েছিল সেটি ‘আর্মা ৩’ নামক একটি ভিডিয়ো গেম। ওই একই ভিডিয়ো গেম থেকে ‘টিভি ৯ ভারতবর্ষ’ চ্যানেলও ফুটেজ সংগ্রহ করে সম্প্রচার করেছিল। ‘টিভি ৯ ভারতবর্ষ’ ‘আর্মা ৩’ ভিডিয়ো গেম থেকে যে ফুটেজটি নিয়েছিল তার সঙ্গে অবশ্য রিপাবলিক টিভির সম্প্রচার করা ফুটেজের মিল নেই। কারণ– দু’টো টিভি চ্যানেলই ‘আর্মা ৩’ ভিডিয়ো গেম থেকে আলাদা আলাদা ফুটেজ নিয়েছিল। আহমেদ মাসুদের একটি ভুয়ো ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়েছিল– পাঞ্জশিরার প্রতিরোধকারী শক্তি পাকিস্তানের এফ-১৬ জেট যুদ্ধ বিমান গুলি করে নামিয়ে দিয়েছে। ট্যুইটে মাটিতে পড়ে থাকা একটি ধ্বংসস্তূপে জেট বিমানের ছবিও দেওয়া হয়েছিল। ‘আজ তক’– ‘দৈনিক ভাস্কর’-এর মতো মিডিয়া এটিকে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখিয়েছিল। পাকিস্তানের সাংবাদিক হামজা আজহার সালাম জানান– ভিডিয়োটি ২০১৮ সালের। আর যে জেট যুদ্ধবিমানের ধ্বংস্তূপে দেখানো হয়েছে সেটি পাকিস্তানের নয়– বরং আমেরিকার। ‘ক্ল্যারিওন ইন্ডিয়া’র দাবি– এভাবেই এক শ্রেণির ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এর ফলে সারা বিশ্বে আফগানিস্তানের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে ঠিকই– কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তালিবানদের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। অনেক রাষ্ট্রনায়ক আহ্বান জানিয়েছেন– তালিবানদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেই কাজ করলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে বরং সুবিধাই হবে। তাই অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তালিবানদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। কারণ– তালিবানদের শিয়রে রয়েছে নতুন পরাশক্তি চিন। তালিবানদের উপর তাদের প্রভাব শক্তিপোক্ত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন– জার্মানি-সহ এমনকি আমাদের দেশ ভারতেরও অসুবিধা হওয়ারই কথা। কাজেই ভুল তথ্য নয়– আফগানিস্তানের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার মধ্যেই রয়েছে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।