পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আরও নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবকদের হত্যা করে তবে থামবে হানাদার বাহিনী। তেল আবিবে বিদেশি গণমাধ্যমের জন্য আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা বলেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেন, বাইবেলে বর্ণিত আছে যে ‘শান্তি ও যুদ্ধের একটি সময় আছে।’ বাইবেলের সেই উদ্ধৃতি দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটা যুদ্ধের সময়। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এই যুদ্ধ চাই।’ খ্রিস্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের উদ্ধৃতির অপব্যাখ্যা করে তিনি খ্রিস্টধর্মকেও অপমান করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তবে হিব্রু বাইবেল হচ্ছে ইহুদিদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। কিন্তু নেতানিয়াহু ‘হিব্রু বাইবেল’-এর উল্লেখ না করে কৌশলে শুধু বাইবেল বলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি পশ্চিমা খ্রিস্টান জগতকে কাছে টানতে চাইছেন। আমেরিকা-ইসরাইল-ফ্রান্স-ব্রিটেনের মতো দেশগুলো গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকারের ধ্বজাধারী মনে করে নিজেদের। অথচ তারাই এখন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ মানুষের প্রাণ নিয়ে চলেছে। ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে যুদ্ধের অজুহাত খুঁজছে ইসরাইল।
নেতানিয়াহু এদিন বলেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইলের অবস্থান স্পষ্ট করতে চান তিনি। ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে বোমা হামলা বা ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি, তেমনি ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার পর ইসরাইলও যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে না। সন্ত্রাসী হানাদার রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে না। সাংবাদিক সম্মেলনের সময়েও যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে না। তার বক্তব্য, যতক্ষণ ইসরাইলের জয় নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ লড়াই অব্যাহত থাকবে। হামাসকে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির আহ্বানের অর্থ হলো ইসরাইলকে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান, সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান। রাষ্ট্রসংঘ বারবার গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। ইউনিসেফ বলেছে, গাজার পরিস্থিতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় খারাপ হচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান কানে তুলছে না ইসরাইল। তারা গাজায় ব্যাপকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার সুড়ঙ্গের মধ্যেই হামাস যোদ্ধাদের শেষ করে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল সেনা। ট্যাঙ্ক নিয়ে রবিবার সীমান্ত থেকে গাজার তিন কিলোমিটার ভিতরে প্রবেশ করেছিল ইসরাইলি হানাদাররা। পরবর্তীতে হামাসের পালটা প্রতিরোধে বিধ্বস্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত ট্যাঙ্ক ফিরে যায় ইসরাইলের সীমান্তে। হামাসের দাবি, তাদের সুড়ঙ্গ বাহিনী সমানে মোকাবিলা করে চলেছে ইসরাইলের স্থলবাহিনীর সঙ্গে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালায় গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ইসরাইলে ১ হাজার ৪০৫ জন নিহত হন। এ ছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরাইল থেকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রেখেছিল হামাস। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। তারপরও ৭ অক্টোবর থেকে গাজাকে অবরুদ্ধ করে নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। গাজায় স্থল অভিযানও চালাচ্ছে ইসরাইল। ২৪ দিন ধরে গাজায় ইসরাইলি হামলায় সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজারই শিশু।