বিশ্বজিৎ ঘোষ: ভোকাল কর্ডে অপারেশনের সময় অবাঞ্ছিত আঘাতের কারণে বদলে যেতে পারে রোগীর গলার স্বর। এই ধরনের সমস্যার সমাধানে এক ইনস্ট্রুমেন্ট উদ্ভাবন করলেন এই রাজ্যের সরকারি এক চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই এই চিকিৎসা-যন্ত্রের পেটেন্টও দেওয়া হয়েছে।
গলা বসে যাওয়া কিংবা স্বরভঙ্গের চিকিৎসা হিসাবে অপারেশনের প্রয়োজনও দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে ভোকাল কর্ডে মাইক্রো ল্যারিঞ্জাল সার্জারি কিংবা লেজার সার্জারি করা হতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই অপারেশনের সময় তাঁদেরকে খুবই সতর্ক থাকতে হয় যাতে রোগীর গলার স্বরে কোনও ক্ষতি না হয়ে যায়। তবে এই ক্ষেত্রে নির্ভুল অপারেশনের বিষয়টি রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ভোকাল কর্ডে ঠিক মতো অপারেশন করা সম্ভব হয় না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক-চিকিৎসক সুদীপকুমার দাসের কথায়, ‘ভোকাল কর্ডের পলিপ বা নডুল, সিস্ট, টিউমার, এমন বিভিন্ন অপারেশনের সময় যদি ভোকাল কর্ডকে এক জায়গায় ফিক্সড করে রাখা সম্ভব না হয়, তা হলে ইনজুরির সম্ভাবনা থেকে যায়। আনওয়ান্টেড এই ইনজুরির কারণে রোগীর গলার স্বর কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
অপারেশনের জেরে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন যাতে হতে না হয়, সেই লক্ষ্যেই ওই চিকিৎসা-যন্ত্রের উদ্ভাবন করেছেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এই অধ্যাপক-চিকিৎসক সুদীপকুমার দাস। তিনি বলেন, ‘ভোকাল কর্ডে অপারেশনের সময় যাতে ইনজুরি না হয় তার জন্য অপারেশনের সময় বাইরে থেকে হাত দিয়ে ঠেলে রেখে ভোকাল কর্ডকে এক জায়গায় ফিক্সড করে রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ ভাবে বেশিক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব নয়। সেই জন্য এই ইন্সট্রুমেন্ট ইনভেন্ট করা হয়েছে। যতক্ষণ অপারেশন চলবে ততক্ষণ এই ইন্সট্রুমেন্টের মাধ্যমে ভোকাল কর্ডকে এক জায়গায় ফিক্সড করে রাখা সম্ভব হবে। এর ফলে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে অপারেশন।’
এই চিকিৎসা-যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ল্যারিঞ্জাল স্টেবিলাইজার। এই উদ্ভাবনে অধ্যাপক-চিকিৎসক সুদীপকুমার দাসের সহযোগী উদ্ভাবক হিসাবে রয়েছেন অধ্যাপক-চিকিৎসক মালবিকা মিশ্র এবং চিকিৎসক প্রীতম চট্টোপাধ্যায়। এই তিন চিকিৎসকের নামে ভারত সরকারের পেটেন্ট অফিস থেকে ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক অল ইন্ডিয়া ইএনটি কনফারেন্সে সিলভার মেডেল জয় করে নিয়েছে এই চিকিৎসা-যন্ত্র। অধ্যাপক-চিকিৎসক সুদীপকুমার দাস জানিয়েছেন, এই ইন্সট্রুমেন্ট তৈরি করতে আট বছর সময় লেগেছে। গত দুই বছর ধরে এর ট্রায়াল-ও চলছে। আগামী দিনে এই চিকিৎসা-যন্ত্রের বিষয়টি জার্নালে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।