নিজস্ব প্রতিনিধি: পাহাড়ের জিটিএ থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ছয় পুরসভার ছয় ওয়ার্ডের নির্বাচনে ফের বাজিমাত তৃণমূল কংগ্রেসের। ফের সবুজ ঝড়। ফের একবার যাবতীয় অপপ্রচার, কুৎসা ব্যর্থ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের প্রতিই আস্থাপ্রকাশ করল আম আদমি। তৃণমূলের দাপটের কাছে দুরমুশ হয়েছে বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএম। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা পদ্ম শিবিরের। অধিকাংশ জায়গাতেই জামানত হারাতে হয়েছে। ফের একবার দলের প্রতি আস্থা জানানোয় সাধারণ ভোটারদের কুর্নিশ জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিপুল সাফল্যের পরেই তিনি ট্যুইট করে বলেছেন, ‘উত্তর থেকে দক্ষিণে ভোটাররা আবারও মা-মাটি-মানুষের প্রার্থীদের উপর ভরসা রেখেছেন। আমাদের সংকল্পের জন্য পাহাড়েও গণতন্ত্র হেসেছে। সকলকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। পাহাড়ের মানুষ যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন, তার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ।’
দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলার ছয় পুরসভার ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। চন্দননগর পুরনিগমের একটি আসনে জয়ী হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী। পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার ২ নম্বর আসনটিও নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস। সেখানে জিতেছেন খুন হয়ে যাওয়া কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু। পানিহাটির আট নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্তও খুন হয়েছিলেন। ওই আসনে জয়ী হয়েছেন তাঁর স্ত্রী মীনাক্ষী দত্ত। বিজেপি প্রার্থীরা ভূমিশয্যা নিয়েছেন। ঝালদায় বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৩৩ ভোট।
গত বিধানসভা ভোটে দার্জিলিং জেলায় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পাহাড়ের তিনটি বিধানসভা আসনের দু’টিতে জিতেছিল বিজেপি। একটিতে বিনয় তামাংদের প্রার্থী। আর সমতলের তিনটি আসনেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। পাহাড়ে দশ বছর বাদে জিটিএ নির্বাচনে লড়তে নেমে চমকপ্রদ ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৪৫টি আসনের মধ্যে ১০টিতে লড়েছিলেন ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থীরা। তার মধ্যে পাঁচটিতেই জয় হাসিল করেছেন। ঘাসফুলের হয়ে লড়ে জিতেছেন প্রাক্তন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিনয় তামাং। ৪৫টি আসনের মধ্যে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা জিতেছে ২৭টি আসনে। অজয় এড্ওুয়ার্ডের হামরো পার্টি জিতেছে আটটি আসনে। এ ছাড়া পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা।
তবে পাহাড়ের চেয়েও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কেন-না শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটে কার্যত সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর চলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস-বিজেপি ও সিপিএমের মধ্যে। ২০১৫ সালে শেষবার হওয়া নির্বাচনে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করেছিল সিপিএম। আর ২০২১ সালে ফাঁসিদেওয়া এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি আসনে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। মূলত আদিবাসী ও তপশিলি সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির শক্ত ভিত কতটা নড়াতে পারে শাসকদল, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। নিজেদের ভিত ধরে রাখতে কোমর কষে ঝাঁপিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। সিপিএম নেতৃত্বও নিজেদের গড় ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু তৃণমূলের অপ্রতিরোধ্য দাপটের কাছে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে দুই প্রতিপক্ষ শিবির। তেমন দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি-সিপিএম। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ন’টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে জিতেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। বাকি চারটি আসনে ভোট গণনা চলছে। ১৯৮৯ সালের পরে প্রথমবারের মতো শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ হাতছাড়া হল বামেদের। ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৯টিতে জিতেছে রাজ্যের শাসকদল। ত্রিশঙ্কু হয়েছে তিনটি পঞ্চায়েত। বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামেদের শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে। ৪৬২টি পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৩১১টি আসনে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। ৭৪টি আসনে জিতেছে বিজেপি। কংগ্রেসের দখলে ১৬ টি আসন। বামেরা জিতেছে ১২টিতে। ৪টি ব্লকের ৪টি পঞ্চায়েত সমিতির ৬৬টি আসনের মধ্যে ৫৪টি আসন গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। ১০টি আসন দখল করেছে বিজেপি আর দু’টি আসন পেয়েছেন নির্দলরা।