মাওলানা শায়খ খলিল-উর-রহমান সাজ্জাদ নোমানি। সংক্ষেপে শায়খ খলিল-উর-রহমান সাজ্জাদ নোমানির পরিচয় হচ্ছে, তিনি বিশ্বখ্যাত আলেম এবং ইসলামের স্কলার। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, একজন ইসলামী শিক্ষাবিদ। পড়াশোনা করেছেন লখনউ-এর দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা এবং মদিনার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি ইউটিউবে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় এবং দেশের সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বর্তমান নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ইসলামী স্কলারের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আহমদ হাসান ইমরান। সঙ্গে ছিলেন আসিফ রেজা আনসারি।
বর্তমান লোকসভা নির্বাচন নিয়ে আপনার মূল্যায়ণ কী?
বর্তমানে আমাদের দেশের পরিস্থিতি বদলে গেছে। আর অধিকাংশ জনগণই একটি বদলাও (পরিবর্তন) চাইছে। তার কারণ, তারা বিজেপির নিয়াত (অভিপ্রায়) ও নীতি বুঝতে পেরেছে। তারা ধরে ফেলেছে, শুধু মুখের কথা দিয়ে উন্নয়ন হয় না।
বর্তমানে দেশে যে বিদ্বেষ ভাষণ ও ঘৃণা প্রচারের রাজনীতি চলছে, সে সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
এটা খুবই লজ্জার কথা যে, দেশের স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদিজি এই কাজে সবথেকে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে তাঁর পদের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে চলেছেন, তাকে এক কথায় বলা যায় ‘শর্মনাক’ (অত্যন্ত লজ্জাজনক)। তিনি সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী বক্তব্য রাখছেন। তবে ভারতের আমজনতার এখন ম্যাচিওয়ারিটি এসেছে এবং দেখা যাচ্ছে, তারা বিজেপির কাজ ও জুমলাবাজিতে মোটেই সন্তুষ্ট নয়। দেখা যাচ্ছে, মিথ্যা কথা প্রচার ও মোদি এখন সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ডাহা মিথ্যা কথা নির্বাচনী প্রচারে বলে যাচ্ছেন। যার কোনও ভিত্তিই নেই। তাঁর মিথ্যা কথাকে টেলিভিশনগুলি ফলাও করে প্রচার করলেও মানুষ তা বুঝতে পেরেছে। কাজেই মোদির ৪০০ পার খোয়াব-ই রয়ে যাবে। বিজেপি ২০০ আসনও পাবে না।
‘ইভিএম বাবা’ এক বড় ভূমিকা পালন করে বলে অনেকেই সন্দেহ করেন।
হ্যাঁ, এই অভিযোগ রয়েছে। তবে মোদি যেভাবে ভুল বকছেন, হতাশাগ্রস্ত হয়ে রয়েছেন এবং ভয় পাচ্ছেন তাতে প্রমাণ হয়, তিনি ইভিএম-এর উপরও বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। নইলে তিনি হঠাৎ করে কেন মুসলিম বিদ্বেষ প্রচার করবেন? হারের ভয়েই মোদিজি এবং অমিত শাহরা এই কাজ করছেন বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
আর এই হারের ভয় বিজেপি নেতৃত্বকে এতটাই পেয়ে বসেছে যে, তাঁরা নির্বাচনের মুখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে জেলে ঢুকিয়েছে, হেমন্ত সোরেনেরও একই অবস্থা করেছে। কিন্তু এইসব করেও তাঁরা কিন্তু সাধারণ মানুষকে কনভেন্স করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি এরা দুর্নীতি করে থাকে তাহলে তার বিচার হোক। দণ্ডিত হওয়ার আগে কেন তাঁদের কারাগারে পাঠানো হবে? আসল দুর্নীতি তো করেছে বিজেপি। নির্বাচনী বন্ড নিয়ে তাদের দুর্নীতি বিশ্বের সবথেকে বড় দুর্নীতিগুলির মধ্যে অন্যতম। এত বড় পর্যায়ের স্ক্যাম দেশে আগে কখনও হয়নি। বিজেপি বড় বড় শিল্পপতিদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দিয়েছে। অথচ ঋণগ্রস্ত কৃষকদের কোনও সাহায্য করেনি। দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। এদের বিন্দুমাত্র দয়া হয় না। মোদিজিদের দয়া সব আদানি, আম্বানিদের জন্য।
বাংলার সন্দেশখালি নিয়েও বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা অপপ্রচার করছেন।
সন্দেশখালির মামলা তো ধরা পড়ে গেছে। মিথ্যা বেশি দিন চলে না। বিজেপি তৃণমূলের সন্দেশখালি নেতা শাহজাহানকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে একজন প্রখ্যাত আলেম হিসেবে আপনার বক্তব্য কী?
আমি বলব, ভোট যেন বিভক্ত না হয়। দেশের মহিলা, ওবিসি, সংখ্যালঘু, দলিত এবং হিন্দু ভাই-বোনকে আমি বলব, এটা রাজনীতি ভোট নয়, এই ভোট দেশকে বাঁচানোর ভোট। বলতে গেলে এটা ‘আর পার কী লড়াই’। এই ভোটে রেফারেন্ডাম হচ্ছে যে, দেশে ফ্যাসিবাদ আসবে, না গণতন্ত্র ও সংবিধান বেঁচে থাকবে? আমি বলব, কোনও প্রার্থীকে আপনার হয়তো পছন্দ হতে না পারে। কোন দলকেও হয়তো আপনি অপছন্দ করতে পারেন। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে যে প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি, তাকে ভোট দিন। সেই দলকে ভোট দিন।
যদি বিজেপি জয়ী হয়, তাহলে দেশ বিভক্ত হবে, দেশের মানুষের মধ্যে লড়াই লেগে যাবে। আমি কয়েকদিন আগে দক্ষিণ ভারত ঘুরে এলাম। সেখানে আমি দেখেছি, তামিলনাড়ু, কেরল প্রভৃতি রাজ্যের মানুষ বলছে, আমরা নর্থ ইন্ডিয়ার শাসন মানব না। মহারাষ্ট্রেও গুজরাত বিরোধী একটা প্রবল হাওয়া বইছে। দেশে আগে এই ধরনের কোনও বিভাজন ছিল না।
এই ঘৃণা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
আমি বলব, এই লড়াইয়ে মুসলিমরা একা নয়। আমরা কখনই প্ররোচিত হয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যাব না। তাদের সম্পর্কে কোনও খারাপ মন্তব্য করব না। হিন্দু, দলিত, ওবিসি, আদিবাসী সকলেই আমাদের সঙ্গে রয়েছে। শুধু কিছু এহসান-ফরমোস মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে।
তাই ভারতীয়দের সংকল্প তৈরি করতে হবে, হিম্মত ও বাহাদুরির সঙ্গে লড়তে হবে, আর যারা তা করতে পারে তারাই জেতে। তাই মজলুমদের হিম্মত রেখে এই ভোটের লড়াইতে সামিল হতে হবে। আর তারাই জিতবে।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)