পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতার আলিপুর আদালতে সিবিআই এজলাসে পেশ করা হয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেল হেফাজতে থাকা রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এদিন তিনি আদালতে ঢোকার আগে এবং পরে অনেক কথায় সাংবাদিকদের বলেন। বিরোধী দলের একাধিক নেতার নাম মুখে এনেছিলেন তিনি। পরে আদালতেও ৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ চেয়েছিলেন পার্থ।
সেই সুযোগ মিলেছিল। এদিন আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ তিনি নিয়োগ কর্তা নন। তাহলে মন্ত্রী হওয়া কি অপরাধ তাঁর’? তবে তিনি এও জানান যে, ‘এই রাজ্যের বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাঁর ভরসা রয়েছে কিন্তু দীর্ঘ ৮ মাস তিনি অন্ধকারে আছেন।দীর্ঘ সময় ধরে তিনি রাজনীতিতে আছেন, কিন্তু এত বছরেও তাঁর বিরুদ্ধে কারোর কোনও অভিযোগ ছিল না। এমনকি কোনও থানায় তাঁর বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনও অভিযোগ করা হয়নি’।
আর নিয়োগ কাণ্ডের প্রেক্ষিতে পার্থ জানান, তিনি শুধু বোর্ডে ছিলেন, কিন্তু তিনি নিয়োগ কর্তা নন।ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে প্রকাশ , এদিন পার্থ আগেই জানিয়েছিলেন যে তিনি ভেবেছিলেন কিছু বলবেন না। কিন্তু দেখলেন না বললে তাঁর বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে সব। সেই কারণেই মূলত এদিন আদালতে মুখ খোলার আর্জি জানান তিনি।
এও মনে করিয়ে দেন, তিনি পড়াশুনায় খুব ভাল ছিল। করোনায় রাস্তায় নেমে কাজ করেছেন। যে করোনা সামলেছে, সে চুরি করতে পারে না। এমনই দাবি তাঁর।এদিন অবশ্য আদালতে তাঁর আইনজীবীও একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কেউ ওএমআর শিট তৈরি করেছে, কেউ প্রশ্নপত্র। এখানে মন্ত্রী কী করবেন? আর যেখানে দুর্নীতির অভিযোগের এফআইআরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কোনও নাম ছিল না, সেখানে কোনও প্রমাণ ছাড়া কী ভাবে তাঁকে ৮ মাস আটকে রাখা হচ্ছে? এদিন সওয়াল-জবাব পর্বে পার্থের আইনজীবী এও বলছেন, ‘নিয়োগে যে দুর্নীতি বা সুপারিশের কথা বলা হচ্ছে তা অনেক নিচুস্তরের বিষয়। এখানে মন্ত্রীর কী ভূমিকা থাকতে পারে তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদতে কী অভিযোগ, সেটাই এখনও পরিষ্কার নয়’।
এদিন আলিপুর আদালত কক্ষে প্রবেশ করার সময় বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীর নাম উল্লেখ করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । তিনি নন, ওই সব নেতারাই যে আসলে দুর্নীতিতে যুক্ত, তেমনটাই দাবি করেছেন তিনি। বৃস্পতিবার দুপুর ১২ টা নাগাদ আদালত চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয় পার্থকে। এদিন কী বলতে চান তিনি? আদালতে প্রবেশ করার সময় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বলব, বলব, পরে বলব।’ পরে আদালতে সওয়াল-জবাব চলাকালীন কুন্তল ঘোষ বা তাপস মণ্ডলের আইনজীবীরা সওয়াল করেন। তখন পার্থকে বলতে শোনা যায়, ‘আইনজীবী যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি কিছু বলতে চাই।
এদিন দুপুর ৩ টের সময় শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের শুনানি।পার্থ বিচারককে বলেন, ‘কয়েকটা কথা বলটে চাই। ৮ মাস ধরে জেলে রয়েছি। বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা আছে।’ আমার এখনও বিশ্বাস আছে, যাই ঘটুক না কেন, সত্য একদিন প্রকাশ হবে। আমার মন্ত্রী হওয়াটা কি অপরাধ? প্রশ্ন পার্থর। আমি খুব ভাল ছাত্র ছিলাম না, আবার খুব খারাপ ছাত্রও ছিলাম না। আমি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে স্কলারশিপ পেয়েছি। স্যার কী অপরাধ করেছি? মন্ত্রী হওয়া অপরাধ? বিচারককে বললেন পার্থ।