পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্যের আবাসন শিল্পে প্রতারণার ঘটনা ঠেকাতে বড়সড় পদক্ষেপ করল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এতদিন রাজ্যে বড়সড় আবাসন কেনার ক্ষেত্রে কিছু রক্ষাকবচ থাকলেও ছোট বা মাঝারি সাইজের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু ছিল না। আর তার জেরে নানান সময়ে গুচ্ছের অভিযোগ উঠেছে প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে।
সেই সব অভিযোগ তুলেছেন ফ্ল্যাটের ক্রেতারা। কার্যত প্রতারণার শিকার হয়েই তাঁরা সেই সব অভিযোগ তুলেছেন। এই সব ক্রেতাদের বড় অংশই মধ্যবিত্ত। এবার এই সব মানুষকে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে এবং তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। মমতার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব প্রোমোটারকেই তাঁদের নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটকে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটিতে নথিভুক্ত করতে হবে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের কাছে গুচ্ছের অভিযোগ আসছিল ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণার ঘটনা নিয়ে। অগ্রিম টাকা দিয়েও বছরের পর বছর ফ্ল্যাটের চাবি না পাওয়া, ‘কাজ চলছে’ অজুহাতে ক্রেতাকে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখার মতো অভিযোগ আসছিল রাজ্যের কাছে। আবার একই ফ্ল্যাট একাধিক ব্যক্তিকে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। শুধু কলকাতা নয়, জেলা শহর বা শিল্পনগরীগুলিতেও এই প্রবণতা বাড়ছিল ক্রমশ।
আর এবার সেই সব অভিযোগের ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রী সব প্রোমোটারকেই তাঁদের নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটকে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি তে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবার থেকে রাজ্যে যে কোনও শহরে বা গ্রামে প্রোমোটারকে ফ্ল্যাট নির্মাণের আগেই সেই প্রকল্পকে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি -তে নথিভুক্ত করতে হবে। নথিভুক্তির পরে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি ওই ফ্ল্যাটের একটি রেজিস্টেশন নম্বর দেবে। ফ্ল্যাট বিক্রি শুরুর আগেই নির্মাতাকে এই রেজিস্ট্রেশন সংগ্রহ করতে হবে। নিয়ম না মানলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারকে। সেক্ষেত্রে তিন বছর কারাবাস বা মোট প্রকল্প খরচের ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে নির্মাতাকে। ৬ জুন থেকে এই আইন লাগু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে।
নয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ৩ কাঠা জমি বা ২০০ বর্গমিটার জমির ওপর নির্মাণ বা একত্রে ৬টি ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হলে তা রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি -তে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে ৫০০ বর্গ মিটার বা তার চেয়ে বড় জমিতে কোনও নির্মাণ করলে বা একত্রে কমপক্ষে ৮টি ফ্ল্যাট তৈরি হলে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি -তে নাম তুলতে হতো। আর তার জেরেই এবার থেকে ফ্ল্যাট সংক্রান্ত কোনও সমস্যা বা অভিযোগ থাকলে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি -তে অভিযোগ জানাতে পারবেন ক্রেতারা।
আগে থেকেই ওই ফ্ল্যাট রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি -তে আওতাভুক্ত থাকায় চটজলদি আইনি পদক্ষেপ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সাধারণ মানুষ যাতে নতুন এই নিয়মের সুবিধা পায়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্যের আবাসন দফতর। এমনকি এই বিষয়ে রাজ্যের আবাসন দফতর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকেও। তাতে বলা হয়েছে, কোনও আবাসন বা ফ্ল্যাট রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি -তে তালিকাভুক্ত না হলে কমপ্লিট সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, একটি নির্দিষ্ট সময় পর সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার বা নির্মাণকারী সংস্থাকে ঋণ না দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেও। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে অভিযোগের বহর নিশ্চিতভাবেই কমবে। স্বপ্নের ফ্ল্যাটবাড়ি কিনতে গিয়ে আর্থিক প্রতারণায় জেরবার হতে হবে না মধ্যবিত্তকে।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)