পুবের কলম প্রতিবেদকঃ গ্রামবাংলার সুদূর প্রান্ত থেকে সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত কলকাতার বুকে এক ঝাঁক নবীন-প্রবীণ সাহিত্য প্রতিভাকে এক মঞ্চে হাজির করল চাতক ফাউন্ডেশন ও সারা বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি মঞ্চ। প্রদান করল সম্মাননা। রবিবার কলেজ স্ট্রিট চত্বরের বেঙ্গল থিওসোফিক্যাল সোসাইটির হল ভর্তি হয়ে গিয়েছিল গুণী মানুষদের সমাবেশে। বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে সাহিত্যের টানে তারা ছুটে এসেছিলেন কয়েক ঘণ্টার জন্য।
কবিতা, গানসহ মনোরম সাংস্কৃতিক মেজাজে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। অলচিকি ভাষায় গান করেন শালবনি থেকে আসা জ্যোৎস্না টুডু। অসমিয়া ভাষাতেও গাওয়া হয় গান। এদিন বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, কবি অনিমা নাথ, তায়েদুল ইসলাম, শিল্পপতি আবদুর রাজ্জাক, শেখ মফেজুল, নজরুল ইসলাম, আবদুল করিম, উৎপল কুমার ধাড়া, দেবিকা বন্দোপাধ্যায়, এমদাদুল হক নূর, সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ। বাংলাদেশ থেকে হাজির হয়েছিলেন শেখ এ সাঈদ ফারসি।
এদিনের অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন প্রাক্তন সাংসদ ও ‘পুবের কলম’ সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। তাঁকে মেমেন্টো দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবী আবদুর রাজ্জাক। হিন্দু-মুসলিম সব ধর্মের মানুষের এই সমবেত উপস্থিতি তাঁকে মুগ্ধ করেছে বলে জানান আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন, বাংলার সংস্কৃতি হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ের সংস্কৃতি । এর বিকাশে উভয় সম্প্রদায়ের কবি-সাহিত্যিকদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
দেশভাগের পর বহু মুসলিম গুণীজন ওপার বাংলায় চলে যান। ফলে এখানে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সেই অবস্থা থেকে সমাজে সাহিত্য-সংস্কৃতির উত্তরণ হচ্ছে। মিশন-স্কুলগুলির শিক্ষা আন্দোলনের ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রেও মুসলিম সমাজের উত্তরণ ঘটছে বলে তিনি জানান। ইমরান আরও বলেন, সূদুর মুর্শিদাবাদ থেকে এসে চাতক ফাউন্ডেশনের শেখ মফেজুল সাহেবরা এই আয়োজন করেছেন। এতে বাংলার অখণ্ড সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে। সমন্বয়বাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশে যেভাবে বিদ্বেষের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রাখার কথা বলেন তিনি। প্রাক্তন সাংসদ বলেন, দেশে বুলডোজার দিয়ে অন্যায়ভাবে বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সংবিধানের বিপরীতধর্মী কাজ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরব হতে হবে সবাইকে।
সভাপতির ভাষণে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, কেউ দার্জিলিং, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, মেদিনীপুর, কেউ বা চব্বিশ পরগনা… বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে এসেছেন। সংস্কৃতির টানে তারা হাজির হয়েছেন। সংস্কৃতি বলতে আমরা কী বুঝি? বৃহত্তর অর্থে সংস্কৃতি একটা জীবনচর্যা। এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরি করে। এর মাধ্যমে ব্যবধান, অপরিচয় দূর হয়ে যায়। এসডিপিআই নেতা তায়েদুল ইসলাম বলেন, মূল্যবোধের অভিব্যক্তির সামষ্টিক রুপ সংস্কৃতি । জুলুম, অন্যায়, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হাতিয়ার রুপে গড়ে তুলতে পারলেই সংস্কৃতি চর্চা সার্থক হবে বলে তিনি মত পেশ করেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে মানপত্র, স্মারক ও উত্তরীয় দিয়ে গুণীজনদের সম্মান জানানো হয়। নতুন গতি-র সম্পাদক এমদাদুল হক নূর, ড. সা’আদুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, দীপক কুমার দাস, অজিত কুমার মণ্ডল, সাদের আলি, সাদ শামিন হোসেন, মুহাম্মদ শাহজাহান সেখ, জাহানারা বেগম, মইনুল হক প্রমুখকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ‘উদার আকাশ’-এর সম্পাদক ফারুক আহমেদ, ‘তালাশনামা’ উপন্যাসের লেখক ইসমাইল দরবেশ ও ‘দুই কাঁধের ফেরেশতা’ গল্পগ্রন্থের লেখক গোলাম রাশিদকে এদিন সম্মাননা প্রদান করে সারা বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি মঞ্চ ও চাতক ফাউন্ডেশন। এদিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হয় ‘দুই বিঘা’ পত্রিকাটিও।