পুবের কলম প্রতিবেদক: নিপা ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস, যার মানে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বাদুড়ের থেকে অন্যান্য প্রাণী ও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। মালয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপা গ্রাম থেকে ভাইরাসে নামকরণ করা হয়েছে। যেখানে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে। সাধারণত, এই ভাইরাস কুকুর, ঘোড়া, শূকর ইত্যাদি প্রাণীকে প্রভাবিত করে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ: শ্বাসকষ্ট এবং ক্রমাগত কাশি সহ জ্বর। তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (গুরুতর বা হালকা)। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ (জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, স্ট্রোক, বমি, গলা ব্যথা, মাথা ঘোরা, তন্দ্রাভাব, স্নায়বিক ব্যাধি যা এনসেফালাইটিস এর নির্দেশ করে। নিউমোনিয়া (কিছু ক্ষেত্রে) তীব্র শ্বাসকষ্ট সহ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় সতর্ক হতে হবে।
সতর্কতা: নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ, হ্রাস এবং এড়াতে প্রতিনিয়ত জল ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। শৌচাগার বা বাথরুম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলার পরেই ফল খাওয়া। পাখি বা কোনও প্রাণীর খাওয়া ফল না ভক্ষণ করা। প্রয়োজনে ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
নিপা ভাইরাস নিয়ে সতর্ক স্বাস্থ্য দফতর। এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব বাহল জানিয়েছেন, কোভিডের থেকেও ভয়ঙ্কর নিপা ভাইরাস। কেননা কোভিডের থেকেও এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই প্রতিটি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সাংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, কোভিতে মৃত্যুর হার যেখানে ২-৩ শতাংশ ছিল, সেখানে নিপা ভাইরাসের ক্ষেত্রে বর্তমানে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ।
শনিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা পুবের কলমকে বলেন, এখনই এতটা উদ্বেগের কিছু নেই। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। যদি কোভিডের মতোই পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে কেন্দ্র সরকারই এই বিষয়ে পদক্ষেপ করবে। রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে যাবে না। তবে চিকিৎসক মহলের পরামর্শ, উৎসবের ভিড়ে নামার আগে মুখে মাস্ক আর স্যানিটাইজারের ব্যবহার দ্রুত রাজ্যে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন রয়েছে। কিছুদিন আগেই রাজ্যে কোভিডবিধি প্রত্যাহার হয়েছে। কিন্তু নিপার থেকে বাঁচতে মাস্কের ব্যবহার দ্রুত ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছে চিকিৎসক মহল। স্যানিটাইজারের ব্যবহার যতটা সম্ভব বাড়ানোর পরামর্শও দিচ্ছেন তাঁরা।
দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র কেরলেই এই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। সেখানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে ২ জনের মৃত্যুও হয়েছে। আর তাই এই ভাইরাসকে ঘিরে আতঙ্ক বাড়ছে দেশজুড়েই।
কেরলে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বেশ কিছু স্কুল ছুটি ঘোষণাও করে দিয়েছে। তুললে চলবে না এই কেরলের মাটিতেই প্রথম কোভিড ভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। তারপর তা ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশজুড়ে। নেমে এসেছিল লকডাউন ও মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিপা ভাইরাস দ্রুত এক রোগীর দেহ থেকে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে কারণে কেরলে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হচ্ছে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি।