পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: হাতে ছুরি কাঁচি আর ব্যাগে কাস্তে নিয়ে ঘোরেন কর্নাটকের গদাগ জেলার মুসথিকোপপার বাসিন্দা, চিকিৎসক–চাষী ডা. জি বি বিদিনহাল। পেশায় তিনি চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসক নন, শল্যচিকিৎসকও। ফলে তার কাজ স্টেথোস্কোপ আর ছুরি, কাঁচি নিয়ে। চিকিৎসক হিসবে তিনি যথেষ্ঠ সফলও। কিন্তু মায়া ছাড়তে পারেন না চাষের। তাই রোগী দেখার কাজ শেষ হলেই ছুটে যান মাঠে। নিজের হাতেই বপন, রোপনের কাজ করেন। যতখুশি কাদা মেখে বাড়ি ফিরে আসেন বেলায়। হাঠাৎ এমন শখ কেন পুষলেন ডা. বিদিনহাল? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আসলে তাঁর বাবা, মা কৃষিজীবী ছিলেন। নিজের এই অস্তিত্ব কখনও ভুলতে চান না তিনি।
বিদিনহাল জানিয়েছেন, চিকিৎসা তাঁর পেশা হলেও চাষবাস তাঁর নেশা। তাই দিনে ২৫–৩০ জন রোগী দেখা শেষ হলে চলে যান মাঠে।
এখানেই শেষ নয়, মাঠে চাষ করতে করতে সেই ফসল কোথায় বিক্রি করা যায়, সেই সব আইডিয়াও সংগ্রহ করেছেন তিনি। কোথায় ফসল বিক্রি করলে লোকসান হবে না, দু’টো টাকা বেশি মিলবে তার বিস্তারিত খোঁজ খবর রাখেন এই ‘আনোখা’ ডাক্তারবাবু। আর শুধু নিজের জমির ফসল বিক্রি নয়, ওই এলাকার যে কোনও কৃষক যদি ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করেন, কোথায় ফসল বিক্রি করলে দু’পয়সা লাভ হবে, তাদেরকে সঠিক জায়গা দেখিয়ে দেন তিনি।
কিন্তু দিনের বেশিরভাগ সময় চিকিৎসা খাতে ব্যায় না করে ফসল বিক্রির পরামর্শ দিয়ে কি লাভ হয় এই দক্ষিণী চিকিৎসকের? এই জবাব দিয়েছেন তাঁর রোগীরা। রোগীদের মতে, সমাজসেবা করতে ভালোবাসেন ডাক্তারবাবু। তাই কখনও তিনি কৃষকের বন্ধু কখনও বা রোগীর। তাদের মতে, ডা. বিদিনহাল কখনও কোনও রোগীকে ফেরান না। দরিদ্রদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা পরিষেবা দেন তিনি। তাঁর একটি হাসপাতালও রয়েছে। ওই এলাকার প্রখ্যাত চিকিৎকদের মধ্যে, তিনি একজন।
তাঁর এক রোগীর মতে, ডাক্তারবাবুর হাতে ম্যাজিক আছে। তিনি হাসিমুখে চিকিৎসা করেন। রোগীকে নিজের ভাইয়ের মত মনে করেন। বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের শিক্ষার সরঞ্জাম কিনতেও সাহায্য করেন তিনি।
৬৮ বছর বয়েসে ফিট থাকতে শরীরচর্চাও করেন । অন্যদেরও উৎসাহ জোগান। স্থানীয় ম্যারাথন প্রতিযোগীতায় বেশ কয়েকটি স্বর্ণপদকও পেয়েছেন তিনি। অনেকে তাঁর মানসিকতা দেখে বলছে, যারা চিকিৎসক হওয়ার পর গরীবের শুশ্রূষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাদের একজনকে খুঁজে পেয়েছে গদাগ জেলার মানুষ।