আহমদ আবদুল্লাহঃ শেষ পর্যন্ত এলজেডি ল’ কলেজে হিজাব পরিহিতা ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের আর ফেরা হল না। সব দিক বিবেচনা করে অধ্যাপিকা সনজিদা কাদির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তিনি হিজাব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারী ওই এলজেডি ল’ কলেজে পুনরায় যোগদান করবেন না। অধ্যাপিকা সনজিদা কাদির এই মর্মে ই-মেল মারফত এক চিঠি লিখে ১৩ জুন, ২০২৪ কলেজ কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। আর কালক্ষেপ না করে ১৩ জুন, ২০২৪ কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই পত্র গ্রহণ করেছেন। তাঁরা অধ্যাপিকা সনজিদা কাদিরকে এক ই-মেল দ্বারা জানিয়েছেন যে, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর এই চিঠিকে মান্যতা দিচ্ছেন। পদত্যাগকারী ওই অধ্যাপিকাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।
ফলে বিধায়ক জনাব হুমায়ুন কবীর বিষয়টির মিটমাট করে ওই অধ্যাপিকাকে পুনরায় স্বপদে ফিরিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা করেছিলেন, তা শেষ পর্যন্ত সফল হল না।
তবে কলেজের চেয়ারম্যান গোপাল দাস এবং অন্যান্যরা হিজাব বা মাথায় স্কার্ফ পরে আসতে মানা করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং অধ্যাপিকা ও মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার এক স্কার্ফ পরিহিতা ছাত্রীর উপর হিজাব না পরার জন্য যে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন তার মুখ্য বক্তব্য ছিল, এই কলেজ কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। তাঁরা এই কলেজকে একটি ‘নিউট্রাল স্পেস’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এখানে হিজাব পরার মতো কোনও ধর্মীয় কার্যকলাপ চলবে না।
চেয়ারম্যান গোপাল দাস ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে ওই অধ্যাপিকা এবং বেলডাঙার ওই ছাত্রী বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, হিজাব কোনও ধর্মীয় কার্যকলাপ নয়। বরং পবিত্র কুরআন বর্ণিত মুসলিম মহিলাদের পোশাকের অন্তর্গত। যেমন শিখরা মাথায় পাগড়ি পরিধান করে থাকেন। আর হঠাৎ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু গোপাল দাস এবং তাঁর সহযোগীরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন। ফলে হিজাবধারী ওই অধ্যাপিকাকে নিজের বিশ্বাস রক্ষা করার জন্য ইস্তফা দিয়ে কলেজ ছাড়তে হয়। পরে তিনি বলেছেন, এটা ছিল আমার সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকার। আর এই অধিকার রয়েছে ওই কলেজে পাঠরতা ছাত্রীদেরও। আর সেজন্যই আমি চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী হিজাব খুলতে রাজি হইনি।
এ দিকে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য মহলেও প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই এলজেডি ল’ কলেজ ও তার চেয়ারম্যান গোপালবাবু পথিকৃতের ভূমিকা নিয়েছেন। কারণ, অন্য কোনও কলেজ বা খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক বা অধ্যাপিকাদের কোনও ড্রেস কোড নেই। তারা এলজেডি ল’ কলেজে ড্রেস কোড চালু করে এক বিপ্লবী নজির সৃষ্টি করলেন। অধ্যাপিকা সনজিদা কাদিরকে পুনরায় ক্লাসে যোগ দেওয়ার চিঠিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ লিখেছেন যে, অধ্যাপিকাকে কলেজেব ফ্যাকাল্টি বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য যে ড্রেস কোড কলেজ বিভিন্ন সময় জারি করবে তা তাঁকে মেনে চলতে হবে। তবে ক্লাস নেওয়ার সময় তিনি তাঁর দোপাট্টা যা বুকে থাকে, তা মাথায় নিয়ে হেডস্কার্ফ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। ‘হিজাব’ শধটিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের ঘোরতর এলার্জি রয়েছে।
আর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে আগত মাথা আবৃত করা হিজাব পরিধানকারী ওই তরুণী ছাত্রীর সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষ যে ব্যবহার করেছেন, তাতে যেকোনও থানায় এফআইআর নিতে বাধ্য। আর সেই অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করারও ক্ষমতা রাখেন। ছাত্রীটিকে একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে আটকে রেখে এবং কোনও মহিলার উপস্থিতি ছাড়াই যেভাবে পুরুষ স্টাফরা তাকে ঘিরে ধরে হিজাব খোলার জন্য ২ ঘণ্টা জোরাজুরি ও মানসিক নির্যাতন করেন, তা প্রকৃতই একটি ঘৃণ্য অপরাধ। এত চাপের মুখেও ছাত্রীটি কিন্তু নিজের ঈমানে অবিচল থেকে হিজাব খোলেনি। তবে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে সে পরদিনই বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়।
এখনও সে তার বেলডাঙার বাড়িতেই রয়েছে। ছাত্রীটি চিন্তিত তার ভবিষ্যৎ নিয়ে। সে বড় আশা করে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। বেলডাঙার এক ভদ্রলোক বলেন, আমরা কখনোই আশা করিনি, এই ধরনের এক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির মুখে খোদ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে কাউকে পড়তে হবে। আর এলজেডি ল’ কলেজের চেয়ারম্যান গোপাল দাস ও অশোকবাবুরা যে ‘নিউট্রাল স্পেস’-এর যুক্তি দিয়ে হিজাব নিষিদ্ধ করার হুকুম জারি করেন, তা তাঁরা নিজেরাই যে কখনও পালন করেননি, সে বিবরণ আগেই ‘পুবের কলম’-এ প্রকাশিত হয়েছে। ওই কলেজ বিল্ডিংয়ের অভ্যন্তরেই গোপালবাবুরা সস্ত্রীক সরস্বতী পুজো করেন ও তাতে অংশ নেন। এ ছাড়া অশোক দাস মহাশয় সরস্বতী প্রতিমার আগুন জ্বালিয়ে স্বয়ং হোমযজ্ঞ করেছেন, তার ভিডিয়োও পুবের কলম-এর কাছে রয়েছে। ‘নিউট্রাল স্পেস’-এর দাবিদারদের কাছে তা পুবের কলম পাঠিয়ে দিতে পারে।
পুবের কলম আশা করবে, গোপালবাবুরা হোমানল জ্বালিয়ে নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী বাণীব¨না করুন, দোল খেলুন, তাতে কোনও ক্ষতি নেই। তবে মুসলিম কিংবা শিখদের ক্ষেত্রেও তাঁরা যদি একটু নমনীয় হন, তাহলে রবীন্দ্রনাথের ভারত তীর্থ কবিতার বার্তাটি এবং ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের পয়গাম মূর্ত হয়ে উঠতে পারে। গোপালবাবুরা কি একটু এগিয়ে আসবেন?
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)