পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং যৌন উৎপীড়ন বিপদজনক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে বলে জানাচ্ছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা হু। যাদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং যৌন উৎপীড়নের ঘটনা ঘটছে সেই মহিলারা তুলনামূলকভাবে হয় তরুণী নয়তো যুবতী। এই ধরনের উৎপীড়নের যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে তা গত দশকের চেয়ে কমেনি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে।
হু’র সমীক্ষা জানাচ্ছে মেয়েদের যৌন হেনস্থার শুরু হয় ৪ জন মেয়ের মধ্যে ১ জনের খুবই কম বয়সে অর্থাৎ ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এই মেয়েরা যৌন হেনস্থার শিকার হন। এবং এইসব মেয়েদের নিগৃহীতা হতে হয় তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধুদের দ্বারা যাদের সঙ্গে তারা জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসা প্রত্যেকটি দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে বিশেষ করে কোভিড অতিমারির সময় বলে জানিয়েছেন হু’র ডাইরেক্টর জেনারেল ড. টেডরস অ্যাধনম খেবরেইয়েসাস।
মেয়েদের বিরুদ্ধে এই হিংসা রোখার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার সাহায্য। মেয়েদের অন্তরঙ্গ বন্ধুদের দ্বারা সেই মেয়েরা বীভৎস হিংসার শিকার হচ্ছেন এবং তাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাই মেয়েদের হু’র পরামর্শ আদর্শ সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে গড়তে হলে ভাল করে ছেলেকে বাজিয়ে দেখে নেওয়ার প্রয়োজন।
সম্প্রতি হু (সোমবার) যে রিপোর্ট জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে প্রতি তিন জন মহিলার মধ্যে একজন মহিলা তার জীবনে হিংসা কিংবা যৌন উৎপীড়নের শিকার হয়েছেন। এই সমীক্ষা করা হয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া (এসইএআরও) বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল যেখানকার দেশগুলিতে ৩৩ শতাংশ মহিলার যৌন হিংস্রতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই রিপোর্ট জানিয়েছেন হু (সিইএআরও) আঞ্চলিক ডাইরেক্টর ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং। তাঁর মতে সেই মহিলার ঝুঁকি বেশি যারা তাদর অন্তরঙ্গ ব্যক্তির সঙ্গে দিন কাটান। ড. পুনম সিং বলেন, অন্তরঙ্গ বন্ধুর হাতে যৌন উৎপীড়নের শিকার হলে স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাব পড়ে। এই প্রভাবটা অবিলম্বে ঘটতে পারে কিংবা এর প্রভাব সুদূরপ্রসারীও হতে পারে। যৌন রোগ, এইচআইভি এবং অপরিকল্পিত গর্ভ ধারণের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
ডা. সিং বলেন, আজ বিশ্বে মেয়েদের অসুস্থতার মূল কারণ বলে এসবকে ধরা হয়েছে। তাছাড়া মহিলা কিংবা মেয়েদের মানবাধিকারও ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। তবে ডা. সিং এর মতে মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং যৌন উৎপীড়নের ঘটনা থামানো যায়। তিনি বলেন, এই গোটা মেয়েদের বিরুদ্ধে ঘটনাটাই লিঙ্গীয় অসমতা এবং ক্ষতিকারক লিঙ্গবৈষমের কারণে মেয়েদের বিরুদ্ধে সব ধরনের যৌন উৎপীড়ন বন্ধ হতে পারে যদি পরিবার এবং সমাজ একটু সচেতন হয় এবং এই ধরনের ব্যাভিচার বন্ধ করতে তারা উদ্যোগ নেয়।
ডা. সিং বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা এই হিংসা ঘটায়। অন্যরা হিংসা দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয় কিন্তু সেটা থামানোর চেষ্টা করে না। সুযোগ এবং পরিস্থিতি অনুকূল হলে হয়তো তারাও মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং যৌন নিগ্রহে শামিল হতো। ডা. সিং বারবার জোর দিয়েছেন মেয়েদের দুর্বলতার উপর। মেয়েদের পুরুষালি চরিত্র যে বিপজ্জনক সেটাও স্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু মুশকিল হল লিঙ্গ বৈষম্য দূর হবে কী করে। এরজন্য প্রয়োজন দূরগামী চিন্তাভাবনার। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এই রোগ সারবে না। হয়তো আমরা প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস পালন করি কিন্তু মহিলাদের অধিকার রক্ষায় আমরা কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করি না। সেটা না করলে মেয়েরা নিরাপদে থাকতে পারবে না বলে মনে করেন ডা. পুনম সিং।
২৫ নভেম্বর মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রতিবাদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সেদিন থেকে শুরু হয় বার্ষিক ১৬ দিনের প্রচার যেখানে লিঙ্গ নির্ভর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানানো হয়। এই প্রচার চলে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেদিন উদযাপন করা হয় মানবাধিকার দিবস। কিন্তু তাতেও কি আমরা মহিলাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন কিংবা যৌন উৎপীড়ন বন্ধ করতে পেরেছি? এরজন্য দায়ী আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ যেখানে মেয়েদের শুধু ভোগের বস্তু হিসেবে দেখা হয়। এরজন্য প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। মেয়েদের শিক্ষালাভ করে নিয়ের পায়ে দাঁড়াতে হবে, কারওর উপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। মেয়েদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ। এর অনেকটাই পরিবর্তন সম্ভব যদি মেয়েরে শিক্ষা লাভ করে আর্ধিকভাবে কারওর উপর নির্ভরশীল না হয়।