করোনা ও করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ক্রমশই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে সমগ্র বিশ্বের কাছে। বছরের শেষের দিকে এই ভাইরাসের দাপট কিছুটা কমলেও ফের আবার তেড়েফুঁড়ে উঠেছে। ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে যে সমস্যার সম্মুক্ষীণ হয়েছিল সাধারণ মানুষ, আবার সেই অবস্থায় ফিরে যেতে হবে কিনা, তা নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকমভাবে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে শুরু হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ বছরের ভ্যাকসিনেশন। কেন্দ্রের তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
ওমিক্রন নিয়ে ঠিক কতটা ভয় পাব, আর কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখব সেই বিষয়ে আমাদের জানালেন বিশিষ্ট পেডিয়াট্রিশান (চাইল্ড স্পেশালিস্ট) ডা.সুব্রত চক্রবর্তী। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললেন পুবের কলমের প্রতিনিধি বিপাশা চক্রবর্তী।
প্রশ্নঃ ওমিক্রন ঠিক কতটা আতঙ্কের?
ডা.সুব্রত চক্রবর্তীঃ ওমিক্রন নিয়ে ক্রমশ গবেষণা চলছে। ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তবে ওমিক্রন খুব দ্রত হারে সংক্রমণ ছড়ায়। তাই মানুষ ভয় পাচ্ছে। ডেল্টার থেকে তিনগুণ বেশি হারে এটি সংক্রমিত হয়। অর্থাৎ তিনগুণ বেশি ক্ষমতা রাখছে ছড়িয়ে পড়ার। তাই কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে কোভিডবিধি।
এখনও আমরা যা তথ্য পেয়েছি, তার ওপর ভিত্তি করে বলা যাচ্ছে এটির ক্ষতিকর ক্ষমতা কম। তবে গবেষণা চলছে। ক্ষতি করার সম্ভাবনা কম, আমরা এই কারণে বলছি যে, এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা কম। বাড়িতে থেকেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠছে।
প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা পরে স্কটল্যাণ্ডে গবেষণার মাধ্যমেও জানা গেছে, এই নয়া ভ্যারিয়েন্টটির এটি ক্ষতিকারক ক্ষমতা কম। তাই অযথা আতঙ্কের কারণ নেই।
প্রশ্নঃ এই ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিহত করতে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী? আমরা দেখছি যাদের দ্বিতীয় ডোজ সম্পূর্ণ হয়েছে, তারাও আক্রান্ত হচ্ছে।
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ এক কথায় বলব ভ্যাকসিনেশন হয়ে থাকলে প্রাণটা বাঁচবে। অনেকের মধ্যে ভ্যাকসিন না নেওয়ার প্রবণতা এখনও রয়েছে। এটা কিন্তু পরবর্তীতে ভীষণ ক্ষতিকর হতে পারে। সমাজের সকলের এই মুহূর্তে দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ, যাতে সকলেই ভ্যাকসিন নেয় সে সম্পর্কে প্রচার করা। ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে ওমিক্রনেও সেটি কাজ করবে।
প্রশ্নঃ ওমিক্রনে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ আক্রান্তের বিষয়ে শিশু বা বড় বলে এখানে আলাদা কিছু নেই। তবে শিশুদের কমপ্লিকেশন অনেক কম। বাচ্চারা এমএমআর (MMR) ভ্যাকসিন নিয়ে থাকে। শৈশব টিকাকরণের মধ্যে এমএমআর ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই সেক্ষেত্রে এমএমআর ভ্যাকসিন কিছুটা সুরক্ষা দেয়, এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রশ্নঃ কোভ্যাকসিন ওমিক্রন আটকাতে কি বেশি সক্রিয় ?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ এই ধরনের কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। সব ভ্যাকসিনই কার্যকরী।
প্রশ্নঃ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ঠিক কতদিন?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ বর্তমান সময়ে নিয়মিতভাবে এই সমস্ত বিষয়ের ওপরে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তাও বলা যায় কোভিশিল্ড বা কোভ্যাকসিন ৬ থেকে ৮ মাস এই সংক্রমণকে আটকাতে পারবে।
তার পরে বুস্টার ডোজ নিলে ভালো।
প্রশ্নঃ আমাদের কি সারাজীবন ভ্যাকসিন নিয়ে যেতে হবে?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ আমার ধারণা আপাতত বেশ কয়েকটা বছর একটি করে ভ্যাকসিন এই ভ্যারিয়েন্টকে আটকাতে প্রয়োজনীয় হতে পারে। মিউটেশন আটকাতে ভ্যাকসিন কার্যকরী। করোনা-ওমিক্রনের ক্ষতিকারক প্রভাব আটকাতে একটা ভ্যাকসিন প্রায় ৭০ শতাংশ কার্যকরী।
প্রশ্নঃ করোনা বা ওমিক্রনে যারা আক্রান্ত হলেন পরবর্তীতে কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ করোনায় ফুসফুস যদি প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেখানে ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। হাঁটা-চলার সময় হাঁপিয়ে যাওয়া এই ধরনের লক্ষ্ণণ দেখা দিতে পারে। আসলে চারদিকে একটা প্যানিক, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সেই ভীতিকে আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে হবে।
প্রশ্নঃ তবে চারদিকে যা পরিবেশ, মানুষ কিভাবে এই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠবে?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ আতঙ্ক কাটাতে সংবাদ মাধ্যম থেকে চিকিৎসক সবাইকে একটা দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচার করতে হবে করোনা, ওমিক্রনকে আটকাতে ভ্যাকসিন জরুরি। অনেকে বলছে, ওমিক্রনকে আটকাতে পারবে না ভ্যাকসিন। এই কথাগুলি ঠিক নয়। যেখানে ভ্যাকসিন ১২০ কোটি হয়ে গেছে, এটা আমাদের দেশের পক্ষে খুব আশাপ্রদ খবর।
প্রশ্নঃ বাজার চলতি কাপড়ের মাস্ক, না এন-৯৫ কোনটি বেশি কার্যকরী হবে?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ কাপড়ের মাস্কও সুরক্ষা দেবে। তবে এন-৯৫ অনেক উৎকৃষ্টমানের। কিছু সময়ের জন্য কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোথাও গিয়ে একজনকে অনেক বেশি সময় কাটাতে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে এন-৯৫ ব্যবহার করা ভালো। তার কারণ এই ধরনের মাস্কগুলি মুখে আটোসাঁটোভাবে বসে থাকে। কাপড়ের বা সার্জিক্যাল মাস্কগুলি সেভাবে টাইট হয়ে মুখে বসে থাকতে পারে না।
এন-৯৫ মাস্কে দুটো আস্তরণ থাকে। মাস্কে পলিকার্বোনেট লেয়ার(প্লাস্টিক লেয়ারের মতো) থাকে। রয়েছে হাইড্রোফোবিক। হাইড্রোফোবিক জলকে পছন্দ করে না।
আমরা যখন কথা বলি, মুখ থেকে বাষ্প নির্গত হয়, যা সহজেই কাপড়ের মাস্কগুলিকে ভিজিয়ে দেয়। সেই জায়গা থেকে আবার ইনফেকশনের ভয় থাকে।
কারণ মানুষ যখন কথা বলছে কাপড় বা সার্জিক্যাল মাস্কগুলি বেশি সময় পড়ে থাকার জন্য সেগুলি ময়শ্চারের কারণে ভিজে যাচ্ছে। কিন্তু এন-৯৫-এ সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ এন-৯৫ জলকে আটকাচ্ছে। ভাইরাস বসলেও ভিতরে যেতে পারছে না।
প্রশ্নঃ একটা এন-৯৫ মাস্ক কতদিন ব্যবহার করতে পারব?
ডা. সুব্রত চক্রবর্তীঃ এন-৯৫ মাস্ক একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া ভালো। তবে এন-৯৫ মাস্ক-এর দাম বেশি। তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত একটা এন-৯৫ মাস্ক একবার ব্যবহার করার পরে ধুয়ে ১৫ দিন দিন থেকে একমাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সব সময় মনে রাখতে হবে নোংরা, অপরিষ্কার মাস্ক কখনই ব্যবহার করা যাবে না। কারণ অপরিষ্কার মাস্ক পরলে ফাংগাস ইনফেকশন যেমন মিউকারমাইকোসিস (Mucormycosis) হওয়ার একটা ভয় থাকে।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)