সেখ কুতুবউদ্দিন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকতা নয়। বড় হয়ে ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল বা রুফাইদা আল আসলামিয়ার (রা.) মতো নার্স হতে চায় মাদ্রাসায় অমুসলিমদের মধ্যে শীর্ষে থাকা নিসা মাঝি। প্রসঙ্গত, রুফাইদা আল আসলামিয়া (রা.) ছিলেন একজন মহিলা সাহাবি, নার্স এবং চিকিৎসক। যুদ্ধের সময় তিনি মানুষকে সেবা করতেন। তিনিই বিশ্বের প্রথম ভ্রাম্যমান হাসপাতালের প্রবর্তনকারী।
পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের আগরডাঙা হাই মাদ্রাসার নিশা মাঝির বাবা দিলীপ মাঝি মুদির দোকানের কর্মী। তাঁর বড় মেয়ে ঝর্ণা মাঝিও মাদ্রাসার থেকেই উত্তীর্ণ। নিশা মাঝি এদিন পুবের কলমকে বলেন, এই ফলাফলে খুশি। আমি ভাবতে পারিনি এত ভালো ফল হবে।
নিশা জানিয়েছে, আশপাশে তিনটি স্কুল রয়েছে। সেখানে ভর্তি না হয়ে পঞ্চম শ্রেণি থেকে এই মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করছি। মাদ্রাসায় পড়ার কারণে অনেকের কাছে কথা শুনতে হয়েছে। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে আমি খুশি। ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। অন্য ধর্মের পড়াশোনা থাকলে ঘৃণা কমে যায়। মাদ্রাসায় পড়াশোনার কারণে অনেকের কাছে কথা শুনতে হয়েছে। তার জবাব দিয়েছি। এই ফলাফলে তাঁরাই এখন উৎসাহ দেখাতে আসছেন। এতে ভালো লাগছে। স্কুলের মতোই মাদ্রাসার সিলেবাস। শুধু আরবি ও ইসলাম পরিচয় সম্পর্কে বাড়তি একটা বিষয় পড়তে হয়। এতে আমার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হয়নি। এখন আমার এলাকা থেকে বহু পড়ুয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে। কারণ এই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা খুবই ভালো। তা ছাড়া এলাকা শান্তিপূর্ণ ।
মাদ্রাসায় এ বছর অমুসলিম পরীক্ষার্থী ছিল ৯৩৪। এর মধ্যে ছাত্র পাশ করেছে ৭৪৯। পাশের হার ৮০.১৯ শতাংশ। উর্দু মিডিয়াম থেকে পরীক্ষার্থী ছিল ৯৫১। এর মধ্যে পাশ করেছে ৮২৪। পাশের হার ৮৬.৬৪ শতাংশ। অমুসলিমদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের আগরডাঙা হাই মাদ্রাসায় নিশা মাঝি (৬৪৫)।
এদিকে রাজ্যের ইংরেজি মাধ্যম মডেল মাদ্রাসার ফলও ভালো হয়েছে। এ বছর মডেল মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছে ৫০ জন। এর মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ মডেল মাদ্রাসার ইউসুল আলি আহমেদ সরকার (৭৩৭)।
ইউসুফের আব্বা পার্শ্বশিক্ষক গোলাম কিবরিয়া সরকার পুবের কলমকে বলেন, ভালো ফল করেছে। এতে ভালো লাগছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ওহেদুজ্জামান সহ অন্যান্য শিক্ষকদের সহযোগিতার জন্যই এই সাফল্য। আগামীতে ইউসুফ হতে চায় ডাক্তার। ইউসুফের বাড়ি ইসলামপুর থানার লোচনপুরের কেশবপুরে।
এই ফলাফলে এলাকার মানুষরাও খুশি। সপ্তম শ্রেণি থেকে এখানে পড়ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা গড়ে তুলেছে। এতে বহু ছাত্রছাত্রী ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে পারছে। ৯২.৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছি। এতে ভালো লাগছে। আগামীতে ডাক্তার হতে চাই। ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা ভালোই হয়েছে। শিক্ষক প্রয়োজন। তবে যা শিক্ষক রয়েছেন, তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি।