পুবের কলম প্রতিবেদকঃ কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটিকে বলিউডের একটি চলচ্চিত্র ‘পিপ্পা’তে ভিন্ন সুরে শোনা গিয়েছিল খ্যাতনামা সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের কণ্ঠে। নজরুলের এই ঐতিহাসিক গানে সুরের এই বদল মেনে নিতে পারেননি দেশ-বিদেশের নজরুলপ্রেমীরা। প্রতিবাদের বিভিন্ন মাধ্যম খুঁজে নিয়েছিলেন তাঁরা। বাধ্য হয়ে ক্ষমাও চাইতে হয় সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার এ আর রহমানকে।
তবে, এবার একটু অন্য প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছেন নজরুল প্রেমীরা। নজরুলের এই খ্যাতনামা গানটির সুর মানুষের মননে মিশিয়ে দিতে ‘ছায়ানট’-এর উদ্যোগে মোট ১৭টির বেশি দলের ২৫০ জন মানুষ যারা নজরুলের গান ও কবিতা নিয়ে চর্চা করেন তাঁরা একত্রিত হয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠান করবেন। প্রথম অনুষ্ঠান হবে নেতাজী ভবনে সন্ধ্যে ছটায়।
গাওয়া হবে নেতাজীর প্রিয় দুটি গান ‘কারার ওই লৌহকপাট’ ও ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’। মঙ্গলবার, কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ছায়ানটের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে জানানো হয় এবং নজরুলের চতুর্থ মুদ্রিত কাব্যগ্রন্থ ‘ভাঙ্গার গান’-এর শতবর্ষ উপলক্ষে ‘শতবর্ষে ভাঙ্গার গান’ নামাঙ্কিত একটি দিনলিপি প্রকাশ করা হয়।
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, ছায়ানট কলকাতার কর্ণধার সোমঋতা মল্লিক, সাবর্ণ সংগ্রহশালার কিউরেটর তথা সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক দেবর্ষি রায় চৌধুরী, পাকড়াশী হারমোনিয়ামের কর্ণধার শুভজিৎ পাকড়াশি এবং অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে নজরুলের বিভিন্ন স্বাদের কবিতা পাঠ করেন ছায়ানট কলকাতার সদস্যরা।
এদিন ছায়ানট কলকাতার কর্ণধার সোমঋতা মল্লিক বলেন, কাজি নজরুল ইসলামের দুটি কালজয়ী গান ‘কারার ওই লৌহকপাট’ এবং ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ ছায়ানট কলকাতার পক্ষ থেকে শতকন্ঠে পরিবেশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছায়ানট কলকাতা বরাবরই কাজের মাধ্যমেই প্রতিবাদ করাতেই বিশ্বাস করে। তাই আমরা চিন্তাভাবনা করে ঠিক করেছি নজরুল ইসলামের এই গানকে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে একজন, দুজনের কন্ঠে নয় শতকন্ঠে গাইব। আমরা এইভাবেই কাজি নজরুলের সৃষ্টিকে ছড়িয়ে দেব এবং এটাই হবে আমরা প্রতিবাদের ভাষা।
এদিন পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান ছায়ানাটের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আমরা বাঙ্গালীরা রবীন্দ্র সঙ্গীতের চর্চা করি, আমরা নজরুল গীতিরও চর্চা করি কিন্তু, ফিরোজা বেগম, কমল দাসগুপ্ত সহ বড় বড় শিল্পীরা চলে যাওয়ার পর নজরুল চর্চার এই গুরুদায়িত্ব সোমঋতা এবং তার এই ছায়ানট সংগঠন তাদের নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তারা নজরুল চর্চার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। দার্জিলিং সহ অনেক জায়গায় তাঁরা ছুটে গিয়েছেন যেখানে নজরুলের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, নজরুল মজলুমদের কথা বলতেন। নজরুল দরিদ্র মানুষের কথা বলেছেন। নজরুল হিন্দু-মুসলিমের উপরে যে সমস্ত ইতিহাস রয়েছে এবং পুরাণ রয়েছে তাতে তিনি পারদর্শী ছিলেন। নজরুল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির রূপকার ছিলেন। বাংলাদেশ তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিল। একইসঙ্গে আগামী ২৮ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের পক্ষ থেকে আয়োজিত মিলন মেলায় সোমঋতা ও ছায়ানটের সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান তিনি।
আরও বক্তব্য রাখেন সাবর্ণ সংগ্রহশালার কিউরেটর তথা সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক দেবর্ষি রায় চৌধুরী এবং পাকড়াশী হারমোনিয়ামের কর্ণধার শুভজিৎ পাকড়াশি।