পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ বিগত কয়েকটা বছর ধরে করোনা মহামারি থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করে আসছে বহু দেশ। তার মধ্যে এই অবস্থাকে এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি দেশ। কখনও হার মানেনি। এই অবস্থার মধ্যেও তারা সুখী থাকার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
মে মাস পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী কয়েকটি দেশকে সুখী দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে। বিশেষ কয়েকটি কারণেই এই দেশগুলি সুখীর তকমা পেয়েছে।
জাতিসংঘের সৌজন্যে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট নামের এক বার্ষিক প্রতিবেদনের এমন তথ্য নিয়ে এ কথা জানায় গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন। মাথাপিছু জিডিপি, প্রয়োজনে সামাজিক সহায়তা, সরকারি দুর্নীতির অনুপস্থিতি, সুস্থ জীবন প্রত্যাশা, জীবন বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা, অন্যদের প্রতি উদারতা ও দানশীলতা এই সংশ্লিষ্টগুলি বিষয়গুলি স্থান পেয়েছে। এই তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে তাইওয়ানের নাম।
১. তাইওয়ান
মাথাপিছু জিডিপি, আয়ু ও সামাজিক সহায়তার ক্ষেত্রে হ্যাপিনেস ইনডেস্কে তাইওয়ানের স্কোর বরাবরই ভালো। সমাজেও যুগান্তকারী একটি বার্তা। যেখানে এক পরিবারের কয়েক প্রজন্ম বাস করে আসছে। ব্যক্তি সুখের চেয়ে সবার একত্রে ভালো থাকাকে মূল্য দেওয়া হয়। তাইওয়ান শুরু থেকেই করোনা মোকাবিলায় ভালো করেছে। এমনকি করোনা বিধিনিষেধের মতো পদক্ষেপও নিতে হয়নি তাদের। আর এই সাফল্যে এ বছর এশিয়ার জন্য ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেসের তালিকায় শীর্ষে তাইওয়ান। বিশ্বের মধ্যে তাইওয়ানের অবস্থান ২৪। গত বছরের চেয়ে এগিয়েছে এক ধাপ।
২. সিঙ্গাপুর
এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুখী দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর হল বিশ্বের অতিধনী একটি দেশ। আয়, প্রাতিষ্ঠানিক আস্থা ও স্বাস্থ্যকর জীবন প্রত্যাশার ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর সত্যিই খুব ভালো অবস্থানে। তবে অন্যদের প্রতি উদারতা ও সামাজিক সমর্থনের শক্তির ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান অতটা ভালো নয়। তাই তো বৈশ্বিকভাবে প্রথম দিকে নেই দেশটি। কারণ, ব্যক্তিগত সম্পর্কই হলো সুখের আসল সুপার চার্জার।
৩. উজবেকিস্তান
মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যে একটি হল উজবেকিস্তান। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, এর স্কোর খুবই ভালো অবস্থানে গেছে। কারণ, এর ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ তাদের জীবনের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে। সামাজিক সহায়তা প্রদান ও উদারত রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবেও ধনী হয়ে উঠছে। ২০ বছর আগে দেশটির দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ, বর্তমানে তা ১০ শতাংশের নিচে। কয়েক বছর ধরে স্থিতিশীলভাবে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে অর্থনীতিটি।
৪. কাজাখস্তান
মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কাজাখস্তান বিশ্ব সুখ প্রতিবেদনে ১৫ অবস্থান এগিয়ে এসেছে। প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার এ দেশ তাদের নিজস্ব কোভিড-১৯ টিকা কাজভ্যাক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল, যা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯৬ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়।
৫. থাইল্যান্ড
গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, দেশব্যাপী তীব্র খরা ও পর্যটন খাতের করোনা মহামারির প্রভাব বিপর্যস্ত করে থাইল্যান্ডকে। তবে এত কিছুর পরও দেশটি হ্যাপিনেস সূচকে বিশ্বে ৫৪তম অবস্থান ধরে রেখেছে। এশিয়ার পঞ্চম শীর্ষ সুখী দেশ। দীর্ঘায়ু, জীবন উপভোগ করার স্বাধীনতা, আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক এগুলো হল এমন কিছু ক্ষেত্র, যেখানে থাইল্যান্ড মহামারির মধ্যেও ভালো করেছে।
৬. জাপান
মহামারিটিরতীব্র আঘাত ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি জাপান। সরকার কিছু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে করোনা বিধিনিষেধের মতো নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আইনের পরবর্তী সংশোধনের কারণে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হলেও কিন্তু অধিকাংশ বিধিনিষেধ বাধ্যতামূলক করা হয়নি। ফলে ২০২০ অর্থনীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়। তবে এত কিছুর পরও এশিয়ার সুখী দেশের তালিকায় ৬ নম্বরে দেশটি।
৭. ফিলিপাইনস
মাথাপিছু জিডিপির দিক দিয়ে ফিলিপাইন ইন্দোনেশিয়া, চিন বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আবার ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্সের দিক দিয়ে ফিলিপাইন তাদের সবার থেকে অনেক এগিয়ে। বর্তমানে সুখী দেশের তালিকায় বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে ফিলিপাইনের অবস্থান ৬১তম। এর আগে তাদের অবস্থান ছিল ৫২।
৮. দক্ষিণ কোরিয়া
গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছিল এবং কখনো সম্পূর্ণ করোনা বিধিনিষেধে যায়নি। করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত করলেও মোকাবিলায় সফল তারা। মূলত এর আগে ২০১৫ সালে সার্চ মহামারির থেকে তারা যে শিক্ষা পেয়েছিল, তাকেই তারা এবার কাজে লাগিয়েছে।
৯. কিরগিজস্তান
মঙ্গোলিয়ার মতো কিরগিজস্তান এমন একটি দেশ, যারা হ্যাপিনেস ইনডেক্সে কয়েক বছর ধরে এগোচ্ছে। ২০১৭ সালে ৯৮তম, ২০১৮ সালে ৯২তম, ২০১৯ সালে ৮৬তম, ২০২০ সালে ৭৪তম। এ বছর মে পর্যন্ত এর অবস্থান ৬৭তম। ভ্রমণের জন্য নিরাপদ এ দেশের জনসংখ্যা ৬৫ লাখ।
১০. মঙ্গোলিয়া
গত ৫ বছরে মঙ্গোলিয়া সুখী দেশের তালিকায় ৩০ ধাপ এগিয়ে এখন ৭০তম। গত তিন দশকে দেশটি তার জিডিপি তিন গুণ করেছে, দারিদ্র্যের হার কমিয়েছে। সেই সঙ্গে ১২ বছরের একটি বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে তার আর্থিক সাফল্য লাভ করেছে।