সুবিদ আবদুল্লাহঃ পাঠাগার আছে অথচ পাঠক নেই। পাঠকের অভাবে ধুঁকছে মালদার ‘মুসলিম ইনস্টিটিউট পাঠাগার’। অথচ পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা সাত হাজার। দৈনিক পাঠক গড়ে পাঁচজন। জানা গেছে, কোভিডের আগে পাঠাগারে উপচে পড়ত পাঠক। এখন যারা আসে— তারা সবাই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া।
বলছিলেন, পাঠাগারের সম্পাদক ববি আহমেদ। তিনি জানাচ্ছেন, ডিজিটাল যুগে পাঠক সংখ্যা কমে গেলেও প্রবীণ পাঠকদের যাতায়াত ছিল। করোনাকালে দীর্ঘদিন পাঠাগার বন্ধ রাখতে হয়। পাঠাগারের প্রবীণ সদস্যের কয়েকজন মারা যান। সেই ভীতির কারণেই দৈনিক পাঠক আসছেন না।
পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে দুটি মুসলিম ইনস্টিটিউট ও পাঠাগার। দুইটিরই প্রতিষ্ঠাকাল ১৯২৯ সাল। ওই বছরই কলকাতায় মুসলিম ইনস্টিটিউট গঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল— বাঙালি মুসলিম সমাজের শিক্ষিত তরুণদের ভেতরে সাংßৃñতিক বোধ গড়ে তোলা। সরকারি অনুদানহীন এই পাঠাগারে চলছে ১৯৮৬ সালে ধার্য করা সদস্য চাঁদায়। চাঁদার পরিমাণ ৩ টাকা, ২ টাকা ও ১ টাকা। যা আজও চলছে। আগে বই সংখ্যা ছিল দশ হাজার। ইতিমধ্যেই মূল্যবান বহু গ্রন্থ নষ্ট হয়ে গেছে অযত্নে। তারপরেও বহু দুঃষ্প্রাপ্য গ্রন্থ রয়েছে এই পাঠাগারে। পলাশি যুদ্ধের পর জনগণের স্বার্থে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম যে রোডম্যাপ করেছিল, তা এখনও সংরক্ষিত আছে এই পাঠাগারে। রয়েছে ১৮,১৯ শতকের বইও।
পাঠাগারের চল্লিশ বছরের সদস্য মোকাদ্দার হোসেন মনে করেন, ডিজিটাল যুগে এমনিতেই আর পাঠক নেই। তাছাড়া এত কম চ¥াদা আর চলে না। তবে এই পাঠাগারকে বাঁচাতে পারে ছাত্রছাত্রীরাই। তার জন্য পাঠ্যবই দরকার। তিনি জানান, গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসা অনেক পড়ুয়ারই পর্যাপ্ত বই থাকে না। তাদের জন্য বই রাখলে তারা এখানে বসে প্রয়োজনীয় পাঠ নিতে পারে।
সূত্রের খবর, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও ধুঁকছে এই পাঠাগার। ববি আহমেদ জানান, গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ্ চৌধুরী দেখে গেছেন পাঠাগারের বর্তমান অবস্থা। তিনিও জানেন পাঠাগারটি বাঁচানো দরকার। কিন্তু তিনি কোনও প্রত্যুত্তর দেননি।
অন্যদিকে, সম্প্রতি সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী পাঠাগার পরিদর্শনে আসেন। বাজেট চান বইয়ের। তাঁর কাছে ৩৫ লক্ষ টাকার পাঠ্যবই চাওয়া হয়। পরে যদিও মন্ত্রীর দফতর থেকে কোনও উত্তর আসেনি বলে জানায় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।
সর্বোপরি, জেলার ঐতিহ্যবাহী মুসলিম ইনস্টিটিউট পাঠাগারটি বাঁচানোর জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য প্রার্থনা করেন পাঠাগারের সম্পাদক।