আবদুল ওদুদ: ভগবানগোলার রেলকলোনি উচ্ছেদের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চর লবনগোলা, হনুমন্তনগর অথবা টিকলি চর বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য লাগাতার প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখেননি ভগবানগোলার বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। পদ্মায় ভেসে যাওয়া ভিটে-জমি হারানো আসহায়তার কথা বার বার নজরে আনেন স্থানীয় বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। শিয়ালদহ মেনডিভিশনের ডিআরএমের সঙ্গে মিটিং-এ স্পষ্ট জানিয়ে দেন ভগবানগোলার রেলকলোনিতে বসবাস কারি মানুষদের উপযুক্ত পুর্নরবাসন না করে কোনও মতেই উচ্ছেদ নয়। আর তাতেই সুফলও মিলেছিল।
আগামীতে কে দাঁড়াবে এই রেলকলোনির মানুষদের পাশে সেটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। শুক্রবার ইন্তেকাল করেছেন ভগবানগোলার বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। তাঁর এই মৃত্যুতে একটাই প্রশ্ন ভগবানগোলা এলাকার বাসিন্দাদের। এক জন বিধায়ক হিসেবে গত কয়েক বছরে তিনি এলাকার মানুষের এত আপনজন হয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুতে সামনে আসছে।
প্রিয় বিধায়ক নেই এই বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারছেন না। ভগবানগোলা স্টেশন লাগোয়া রেলকলোনিতে বসবাস করেন হিরা খাতুন। বিধায়কের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পুবের কলমকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইদ্রিশ আলিকে তাঁরা অবিভাবক ভাবতেন। এতটাই কাছের মানুষ ছিলেন যে রেলকলোনিতে এসে ভাঙাচোরা ঘরে চেয়ার নিয়ে বসে পড়তেন। তাঁদের দুঃখ দুর্দশার কথা জানার চেষ্টা করতেন। আখেরিগঞ্জের পদ্মার ভাঙনের পর ভিটেমাটি হারিয়ে কয়েক হাজার মানুষ রেল লাইনের দু’পারে বসবাস করেন।
এঁদের জন্য ইদ্রিশ আলি লাগাতার আন্দোলন করেছেন। এই সমস্ত পরিবারগুলোকে যাতে জমির পাট্টা দিয়ে যাতে স্থায়ী বসবাসের জায়গা করে দেওয়া যায় তার জন্য একাধিকবার আলোচনায় বসেছেন। ইদ্রিশ আলিকে হারিতে তাঁরা আজ আজ শোকে বিহ্বল।
ভগবানগোলা বিধানসভা এলাকায় নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা সব থেকে বেশি। ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে আবাস যোজনার উপর বেশি নির্ভরশীল। এই এলাকায় এখনও বিভিন্ন গ্রাম রয়েছে যে গ্রামে মানুষরা আবাস যোজনার ঘর থেকে বঞ্চিত। ইদ্রিশ আলি সেই সমস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের জন্য কথা বলেছেন। এখন কে তাঁদের জন্য ভাববেন সেটাই মনে করছে মাদাপুরের রেজওয়ানুল।
ভগবারগোলা বিভানসভার ২ নম্বর ব্লকের একটি বড় অংশ রয়েছে পদ্মার ওপারে। সে সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য লাগাতার চেষ্টা করেছে বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। সব গ্রামে না হলেও কিছু গ্রামে তাঁর প্রচেষ্টায় পৌঁচেছে বিদ্যুৎ। সেই সমস্ত গ্রামের মানুষ প্রিয় বিধায়ককে হারিয়ে শোকাকাকাতুর।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য আবু সায়েম রিপন বলেন, বিধায়ক হিসাবে ইদ্রিশ আলি যা সুনাম অর্জন করেছে অতীতে কোনও বিধায়ক এই এলাকায় এতটা সুনাম অর্জন করতে পারেননি। প্রতিটি এলকায় তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। যে কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে তাঁকে দেখা যেত। ক্লাব কিংবা পাড়ার অনুষ্ঠান সবেতেই তিনি ছুটে যেতেন।
ইদ্রিশ আলিকে কেউ কেউ পরিযায়ী বিধায়ক বলে কটাক্ষ করতেন। কিন্তু তাঁদের তিনি মোক্ষম জবাব দিয়ে ছিলেন। ভগবানগোলায় তিনি নিয়ে ছিলেন নিজস্ব ঘর। সেখানেই মাসের পর মাস থাকতেন। বিশেষ কাজ ছাড়া তিনি কলকাতা আসতেন না। ভগবানগোলাতে তিনি অতি আপন করে নিয়ে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু শুধু ভগবানগোলা নয় তৃণমূলের এক বড ক্ষতিবলে বর্ণনা করেন আবু সায়েম। ইদ্রিশ আলির ছায়া সঙ্গী মফিজুল হক তাঁর স্যার নেই কোনও মতেই মানতে পারছেন না। গত ২৫ বছর ধরে যে লোকটিকে আগলে রেখে ছিলেন তাঁর মৃত্যুতে বাক্যহারা। তিনি বলেন, শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয় রাজ্যবাসী হারাল এক যোগ্য সংখ্যালঘু মানুষের পরমআত্মীয়কে।
এদিন তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ইদ্রিশ আলির শারীরিক অবস্থার অবনিত ঘটছিল। শেষ মুহূর্তে তাঁকে অক্সিজেন সার্পোটও দিতে হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার গভীররাতে তিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.21-PM.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM-1.jpeg)
![](https://archived.puberkalom.com/wp-content/uploads/2024/06/WhatsApp-Image-2024-06-03-at-7.46.20-PM.jpeg)