পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই ভারতেই যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পেশ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। প্রতিবেদনে প্রকাশ সামগ্রিক ভাবে ৮৭ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীই ৩০টি দেশের বাসিন্দা। ‘হু’-এর যক্ষ্মা সংক্রান্ত ২০২৩-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ভারতে। হু-এর রিপোর্ট বলছে, গোটা বিশ্বের নিরিখে মোট যক্ষ্মা রোগীর ২৭ শতাংশই ভারতে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৮.২ লাখ যক্ষ্মা আক্রান্তের মধ্যে ১২ শতাংশ (৩ লক্ষ ৪২ হাজার) রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যক্ষ্মা আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে ভারত। ভারতের পরেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া (১০ শতাংশ), চিন (৭.১ শতাংশ), ফিলিপাইন (৭ শতাংশ), পাকিস্তান (৫.৭ শতাংশ), নাইজেরিয়া (৪.৫ শতাংশ), বাংলাদেশ (৩.৬ শতাংশ) ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (৩ শতাংশ)। তবে এই উদ্বেগের মধ্যে স্বস্তির খবর এটাই যে, আগের চেয়ে ভারতে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কমেছে। ২০১৫ সালে ১ লাখ জনের মধ্যে ২৫৮ জনই আক্রান্ত হতেন যক্ষ্মায়, সেখানে ২০২২ সালে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ১৯৯ জনে। তার পরেও চিন্তার বিষয় হল সামগ্রিক ভাবে যক্ষ্মা আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে ভারত। এই হার এখনও বিশ্বব্যাপী গড়ে প্রতি এক লাখ জনে ১৩৩ জন যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর চেয়ে অনেক বেশি। মৃত্যুর পরিসংখ্যানও ভয়াবহ। ভারতের ১২ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ ১০০ জন রোগীর মধ্যে ১২ শতাংশই ভারতীয়। এই সংখ্যাটি বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ করলে ৫.৮ শতাংশে দাঁড়ায়। সিঙ্গাপুরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে কম, মাত্র ১ শতাংশ। চিন ১৪ তম স্থানে রয়েছে। দেশটিতে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার মাত্র ৪ শতাংশ। বর্তমান সময়ে সঠিক চিকিৎসা হলে সুস্থ হওয়া সম্ভব, কিন্তু তাও মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনা মহামারির সময় গোটা বিশ্বে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। প্রতিবেদনে অনুমান করা হচ্ছে, মহামারির হাত ধরেই এই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। কোভিড পূরবর্তী সময়ের নিরিখে কোভিডের সময় কালে ২০২০-২০২২ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষের যক্ষ্মায় মৃত্যু হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ, ২০২২ সালে ১৯২টি দেশের ৮৭ লাখেরও বেশি মানুষ যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়েছেন। ‘হু’ ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে রোগের উপর নজরদারি শুরু করে, সেখানে দেখা যায় যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা আগের রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে।
প্রতিবেদনটি ২০২২ সালে টিবি বা যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিষেবাগুলিকে পুনরুদ্ধারের কথাও তুলে ধরেছে। তবে করোনার কারণে এই নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই হাতের বাইরে গিয়েছে।