পুবের কলম প্রতিবেদকঃ এবার পুরসভার অধিবেশনেও গাওয়া হল রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’। এবার থেকে প্রত্যেক অধিবেশনে এবং যেকোনো সরকারি অনুষ্ঠানেই গাওয়া হবে এই রাজ্য সঙ্গীত। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে অধিবেশনের শুরুতে রাখা হবে রাজ্য সঙ্গীত এবং শেষ করা হবে জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।
প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য বিধানসভায় রাজ্য সঙ্গীত এবং রাজ্য দিবস নিয়ে প্রস্তাব এনেছিল তৃণমূলের পরিষদীয় দল। সেই নিয়ে গত বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী একটি নির্দেশিকা জারি করেন। সেই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’-কেই ‘রাজ্য সঙ্গীত’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের সমস্ত অনুষ্ঠান, কর্মসূচির শুরুতে ১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড ধরে গাইতে হবে ‘রাজ্য সঙ্গীত’। একই সঙ্গে, সেই অনুষ্ঠানের শেষে গাইতে হবে জাতীয় সঙ্গীত। পাশাপাশি, এই দুই গান উঠে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে গাওয়ার কথাও বলা হয়। রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে চিহ্নিত ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও একাধিক অনুষ্ঠানে গেয়েছেন। স্পেনে শিল্প সম্মেলনে গিয়েও রাজ্য সঙ্গীত গেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি ২৯তম চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনেও গাওয়া হয় গানটি। গতকাল ৪৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও এই গান গাওয়া হয়।
শুক্রবার প্রথমবার কলকাতা পুরনিগমের মাসিক অধিবেশনে রাজ্য সঙ্গীত গাওয়া প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, আমরা অত্যন্ত ধন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আমাদের নিজস্ব রাজ্য সঙ্গীত। আমরা ভারতীয় হিসেবে অত্যন্ত গর্বিত। আমাদের রবি ঠাকুরের গান ‘জন গণ মন অধিনায়ক’।
এটা গেয়ে আমরা গর্ব প্রকাশ করি ভারতীয় হিসেবে। আবার, বাঙ্গালী হিসেবে বাংলার মানুষ হিসেবে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গেয়ে সমান ভাবে গর্ব বোধ করি। এটাও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান আর এটার একটা বড় তাৎপর্য হল, সেসময় ঠিক আজকের মত অবস্থা হয়েছিল যখন বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল। মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
বঙ্গকে দুটো ভাগে ভাগ করা হচ্ছিল শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাস্তায় নেমে বলেছিলেন ‘বাঙ্গালীর ঘরে যত ভাইবোন এক হউক এক হউক’। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিলেন, ধর্মের ভেদাভেদের বিরুদ্ধে ছিলেন। আর আজও আমরা রবীন্দ্রনাথের রাস্তায় ধর্মের ভেদাভেদের বিরুদ্ধে বাংলায় সবাই এক। সব ধর্মের মানুষ এক। আমরা সংঘবদ্ধভাবে বাংলায় থাকি। এটা আমাদের গর্ব। তাই আমাদের বাংলার সঙ্গীত হয়েছে সেটাই যেটা ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবে রবীন্দ্রনাথ গেয়েছিলেন। সব জায়গাতেই এবার থেকে প্রথমে এই রাজ্য সঙ্গীত গাওয়া হবে এবং শেষে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে।