পুবের কলম প্রতিবেদক: ২০১১ আদমশুমারিতে হরিয়ানার ১০০০ পুরুষ অনুপাতে নারী ছিল ৮৬১। ২০২২ সালের হিসেবে সেই অনুপাত বেড়ে হয়েছে পুরুষ ১০০০ নারী ৯৫৯। অর্থাৎ মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এখানকার কুওয়ারা বা অবিবাহিত পুরুষদের সমস্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। বেড়ে চলেছে অবিবাহিত পুরুষদের সংখ্যা। হরিয়ানা এমনই এক রাজ্য যেখানকার পাত্রদের জন্য পাত্রী তালাশ করা হয় বিহার, পশ্চিম বাংলা, ওড়িশায়।
হরিয়ানার বিজেপি সরকার কয়েক সপ্তাহ আগে ৪৫ থেকে ৬০ সাল বয়সি অবিবাহিত পুরুষদের জন্য পেনশন ঘোষণা করেছে। পেনশনের পরিমাণ মাসে ২৭৫০ টাকা। ৬৫০০০-এর বেশি মানুষ পেনশন রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন এ পর্যন্ত। কিন্তু পেনশনেও স্বস্তি নেই কুওয়ারা মহলে।
কুওয়ারাদের অবশ্য কোনও সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন নেই। তবে তারা জোটবদ্ধভাবে সরব হচ্ছেন ইদানীং। মুখ খুলছেন তাদের করুণ অবস্থা নিয়ে। এক হিন্দি প্রত্রিকার টিম এই বিষয় নিয়ে হরিয়ানায় সার্ভে করেছিল। তারা কুওয়ারাদের সঙ্গে বাতচিত করে তাদের ক্ষোভের আঁচ সংগ্রহ করে। জিন্দে বিজেপির এক রাজনৈতিক সভায় এলাকার অবিবাহিতরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের দাবি, রোজগার নেই। সে কারণে পাত্রীর বাবা তাদের পছ¨ করছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে ঘোষণা করেছেন অবিবাহিত পুরুষদের ‘কুওয়ারা ভাতা’ বা অকৃতদার পেনশন দেবেন। কিন্তু কুওয়ারাদের দাবি, রোজগারের ব্যবস্থা করুন তাহলে এই পেনশন আর দিতে হবে না।
রানধানা গ্রামের ৪০ বছরের সঞ্জয় তার নিজের কাহিনি জানালেন মিডিয়ার সামনে। বলেন, কয়েকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাত্রী খুঁজে পায়নি। গেরুয়া গামছা কাঁধে বড় দাড়ি রাখা সঞ্জয় মিডিয়ার সামনে তাঁর দর্দ ভরা কাহিনি বয়ান করলেন। বলেন, ভোটের সময় বিজেপির এক নেতা আমাদের সমস্যা শুনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আরে, ভোটে জিততে দাও। তার পর দেখবে ট্রেন ভর্তি করে মেয়ে এনে দেব। যাদের পছন্দ হবে বিয়ে করে নেবে। কিন্তু ভোট মিটে গিয়ে ফের ভোটের সময় হয়ে এল। সেই ট্রেন এল না। আর না এল মেয়ে। আমাদের বয়স বেড়ে গেল চার বছর। সঞ্জয়ের গ্রামে অবিবাহিত পুরুষদের সংখ্যা এখন বেশি।
হরিয়ানায় বিয়ের জন্য পাত্রীর বাবা প্রথমে খোঁজ করেন পাত্রের বাবার জমিন কতটা আর কোথায় চাকরি করে। কিন্তু বিজেপি জমানায় এই রাজ্যে কাম ধান্ধা বনধ। চাকরি নেই, রোজগার নেই, গোরক্ষা দলে নাম লিখিয়ে হাতখরচা চালাচ্ছে অনেকে।
আবার বেশির ভাগ গ্রামে কুওয়ারাদের অন্য চোখে দেখা হয়, ঠাট্টা, মসকরা, টিটকিরি সহ্য করতে হচ্ছে অনেক। অনেকের কাছে জমিন নেই, রোজগার নেই, বেটি দিতে চাইছে না কেউ। তাই বাধ্য হয়ে পেনশনের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে অনেককে। সঞ্জয়ের গ্রামে ৩ শতাংশের বেশি পুরুষ অবিবাহিত। মিডিয়ার সামনে তারা জানাতে দ্বিধা করলা নিজেদের পরিবারের লোকরাও তাদের ভালো চোখে দেখছে না। টাকা খরচ করে বাইরের রাজ্যের গরিব মেয়েদের আনার যে প্রবণতা রয়েছে সেটা নিয়ে তাদের মন্তব্য, ‘টাকা দিয়ে বউ কেনা’ ভালো লক্ষণ নয়। এইসব পরিবারকেও ভালো চোখে দেখা হয় না।
এই গ্রামের বহু মানুষ তাদের কষ্টের কথা স্বীকার করলেন, কে কতবার বাতিল হয়েছে পাত্রীর বাবার কাছে। কাকে অনুষ্ঠানে দেখে মুখ কুঁচকে সরে গিয়েছে পরিচিতরা। কেউ আবার বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাচ্ছে না নিকটাত্মীয় হলেও।
তাদের বক্তব্য, আমাদের ঝুঠ বলে ভোট নিয়েছে রাজনৈতিক নেতারা। এই সমস্যা নিয়ে চিন্তায় খাপ পঞ্চায়েত নেতারাও। তারা জানালেন, বেটি বাঁচাও অভিযান চলছে, কন্যা ভ্রূণ হত্যা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে যাদের জমিন কম তাদের বিয়েতে দিককত হচ্ছে এটা মানতেই হবে।