পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ‘আমরা বাঁচতে চাই। আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই যারা শিশু হত্যা করছে তাদের শাস্তি হোক। আমাদের খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং শিক্ষা দরকার।’ আল শিফা হাসপাতাল চত্বরে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের আকুল আবেদন সবার চোখে পানি এনে দিয়েছে। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন করে এই যুদ্ধ সবথেকে অসহনীয় হয়ে উঠেছে শিশুদের কাছে। তাদের কী কী যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, তাও সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরল একদল শিশু। তাদের সেই সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এই ভিডিয়ো দেখে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসরাইলের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
এই ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের মধ্যে কেউ এতিম, কারওবা বাবা-মায়ের চিকিৎসা চলছে কিংবা কেউ যুদ্ধের শিকার বা বাস্তুচ্যুত শরণার্থী। ইসরাইলি বোমা-হামলার হাত থেকে বাঁচাতে আল-শিফা হাসপাতালই একমাত্র আশ্রয়। সাংবাদিক সম্মেলনে ১২-১৫ বছরের এক শিশু তার হাতে একটি কাগজ ধরে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য রাখছে। তার আশপাশে আরও অনেক শিশু ও মানুষকে দেখা যায়। শিশুটি বলে, ‘৭ অক্টোবর থেকে আমরা গোটা বিশ্বের সামনে গণহত্যা, হত্যা, বাস্তুচ্যুত হতে দেখেছি। চারদিকে শুধু ধ্বংসের উন্মত্ততা। চোখের সামনে ক্রমাগত বোমা হামলা হতে দেখেছি। আমরা অনেকেই আমাদের মাথার ছাদ হারিয়েছি… আমাদের বাবা-মাকে হারিয়েছি… আমাদের ছোট ভাই-বোনদের হারিয়েছি।’
এখানেই থামেনি যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুটি। নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে বলে, ‘ঘনঘন বোমা হামলা থেকে বাঁচতে নিরাপদ জায়গার সন্ধানে আমরা আল-শিফা হাসপাতালকে আমাদের আশ্রয়স্থল বানিয়েছি। কিন্তু যখন আল-শিফা হাসপাতালও দখল করা হয় এবং এখানেও হামলা হয়, তখন মনে হয় আমরা এখানেও নিরাপদ নই।’
শিশুদের উপর যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওই শিশু বলেন, ‘ইসরাইল বিশ্বের কাছে মিথ্যা বলছে, তারা শুধুমাত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের টার্গেট করছে, কিন্তু আমাদের মতো অসংখ্য শিশু একাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। মৃত্যুর হাত থেকে কোনও রকমে রক্ষা পেয়েছি।’ ওই শিশু সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলে, এখানে আমরা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত রয়েছি। অনেক দিন ধরেই আমাদের পান করার মতো উপযুক্ত পানীয় জল নেই। তৃষ্ণা মেটাতে নোংরা পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছি।’
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তানিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। গাজায় মানবিক সংকট এখন কল্পনার অধিক।’ ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ৯,৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে খবর।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী আল-কাইলা বলেন, নিহত ৯,৭০০ জনের মধ্যে শিশু রয়েছে ৪,৮০০ শিশু। মার্কিন বিশেষ দূত ডেভিড স্যাটারফিল্ড বলেছেন, গাজা উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছে ৮ থেকে ১০ লক্ষ মানুষ। যার ফলে মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।