সেখ কুতুবউদ্দিনঃ সফলতা কে না পেতে চান। কিন্তু কীভাবে, কোন পথ অবলম্বনে মিলবে সফলতা। এমন টিপস বা বই খুঁজতে হামেশাই পড়ুয়া থেকে মধ্যবয়সীদের দেখা মেলে বইপাড়ায়। কিন্তু ভালো বইয়ের অভাব। সেই অভাব মোচন করছেন প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা অনুপ্রেরণামূলক বই আলোড়ন ফেলেছে এপার-ওপার, দুই বাংলাতেই। ২০ বছর আগে জীবনবাদী আন্দোলন বহু মানুষকে নিযুক্ত করেছেন পার্থবাবু।
রবিবার ছিল তাঁর ৮৪তম জন্মদিবস অনুষ্ঠান। সেই উপলক্ষে সল্টলেকের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে ছিল পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কচিকাঁচারা নৃত্য পরিবেশন করেন। এর পর শুরু হয় আশাতরু প্রকল্পে যোগদানকারীদের সংবর্ধনা। পরে সঙ্গীত পরিবেশন ও জীবনযোদ্ধা ও বীরঙ্গনা সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। এ দিনের অনুষ্ঠানে ক্যানসার থেকে আরোগ্যের পথে তিন লে’ক-লেখিকা নন্দিতা আচার্য্য চক্রবর্তী, গীতিকণ্ঠ মজুমদার, রাজীব শ্রাবণকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়। মোট ১২ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা পেশায় নার্স রেণু খাতুনের হাত কেটে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। তিনি এখন সুস্থ। তবে মনোবল হারাননি। বর্তমানে তিনি বর্ধমান হাসপাতালে কর্মরত। অনুষ্ঠানে জীবনযোদ্ধা সম্মান গ্রহণ করে মঞ্চে তিনি পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গে কথা বলেন।
ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন ‘অনুপ্রেরণা দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অসম-বাংলাদেশ-সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বহু বিশিষ্টব্যক্তি।
শতাধিক গ্রন্থের লেখক ড: পার্থ চট্টোপাধ্যায় বহু মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। বিশ্বের প্রায় ৩৫০টি দেশ সফর করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সকলের সঙ্গে ভাগ করে দেওয়ার প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছেন। হতাশাকে দূরে সরিয়ে কীভাবে মানুষ আলোর দিশা পাবেন, জীবনবাদী বহু গ্রন্থ লেখনীর মাধ্যমে নিরলস চেষ্টা করছেন পার্থবাবু।
উপান্যাস, গল্প, কিশোর সাহিত্য, রোমাঞ্চ, ভৌতিক গল্প, কৌতুক, হাসি, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা, রাজনীতি, মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞান নিয়ে ৫০ টিরও বেশি জীবনবাদী বই লিখে দৃষ্টান্ত গড়েছেন। অবক্ষয় রুখতে মূল্যবোধের বিকাশের জন্য সদা জাগ্রত তিনি।
প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গা গ্রামে ১৯৩৭ সালের ২৬ অক্টোবর জন্ম ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্রে যোগ দেন তিনি। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান নিউজপেপার সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনাও করেন। তাঁর লেখা বই-এর মাধ্যমে যুব-ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া মঞ্চে পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান ‘এ জীবন ধন্য করো’ শীর্ষক একটি বইয়ের উদ্বোধন করেন। আহমদ হাসান ইমরান বলেন, চিন্তানায়ক ও কর্মবীর ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠানে এসেছি।
‘সবার সঙ্গে’ বইয়ের উদ্বোধন করেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর। ‘য’ন যৌবন’ বইয়ের উদ্বোধন করেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, রেজাউল করিম, কান্তা চক্রবর্তী, ডা. অমরনাথ মল্লিক প্রমুখ। নেতাজিনগর কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর একটি তথ্যচিত্র পরিবেশন করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে এসে পুবের কলম-এর সাংবাদিক সামিমা এহেসানা বলেন, ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানে এসে খুশি। উনি অন্য মানুষদের মতো আমাকেও অনুপ্রেরণা ও পথ দেখিয়েছেন।