পুবের কলম প্রতিবেদক: মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা ও ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে বৈঠকের পর কড়া নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের। সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে বাংলার বারো মাসের তেরো পার্বণ কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাজীব কুমার লোকসভা নির্বাচনকে চোদ্দো পার্বণ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং সেই পার্বণে যাতে সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারে তার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানান। রাজ্যকে নির্বিঘ্নে ভোটের ব্যবস্থা করারও বার্তা দেন রাজীব কুমার। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপর আমরা ডিজি মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই আমাদের জানিয়েছে, তাঁরা অবাধ শান্তিপূর্ণ ও হিংসামুক্ত নির্বাচন চান এবং কমিশন তা করতে বদ্ধপরিকর। যাতে ভয়মুক্ত হয়ে প্রত্যেক নাগরিক উৎসবের মেজাজে ভোট দিতে পারে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, আমলাতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে এখানে পক্ষপাতিত্ব করা হয়। একটা সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে, রাজীব কুমার জানান, ভোট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পর্যায়ের হিংসাকে কড়া হাতে দমন করা হবে। কোনও রকমের সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে থাকবে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা। সেই বিষয়গুলোর ওপর নজর দেওয়ার কথা বলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। আমাদের কাছে রাজনৈতিক দলগুলি দাবি জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরা যাতে অনেক বেশি সংখ্যায় বেশি জায়গায় লাগানো যায়। এছাড়া, র্যালির ক্ষেত্রে যেন অনলাইনে অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে তাতে কোনও পক্ষপাত না হয়। পাশাপাশি ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আরও বেশি করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে হবে বলে রাজনৈতিক দলগুলি দাবি জানিয়েছে বলে জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। রাজ্যে যাঁরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন, যেমন গ্রিন পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের যাতে ভোটের কাজে ব্যবহার করা না হয়, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান রাজীব কুমার। পাশাপাশি তিনি বলেন, আধার কার্ড যদি বাতিলও হয়ে যায়, বা ভোটার এই কার্ড নিয়ে কোনো সমস্যা থাকে তাতে ভোটে দিতে কোনও সমস্যা হবে না।
রাজীব কুমারের কড়া বার্তা, আমি একটা বিষয়ই সুনিশ্চিত করে বলে দিতে চাই, কোনওভাবেই নির্বাচনে কোনওরকমের হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। টাকার খেলাও বরদাস্ত করা হবে না। ভোটার উৎসবের মেজাজে ভোট দেবে, এটা করতে প্রশাসন ও আমরা নিশ্চিতভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছি, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার যেন তাঁদের অধঃস্তনদের এক্ষেত্রে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। যদি তাঁরা করেন তো ভালো, না হলে আমরা তাঁদের দিয়ে করিয়ে নেব। কোনও অভিযোগ আসলে সেখানে ১০০ মিনিটের মধ্যে প্রতিনিধিরা পৌঁছাবেন এবং তার ওপর কাজ করা শুরু হবে। রাজীব কুমার আরও জানান, আন্তঃ রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সীমানায় বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। মাদক পদার্থের ওপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে যাতে সেগুলি কোনও ভাবেই বর্ডার থেকে পাচার না হয় এবং তার সঙ্গে বেআইনিভাবে টাকা লেনদেনের ব্যাপারটিও দেখছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে প্রতিদিন বৈঠক করতে হবে এবং বৈঠকে আলোচিত সমস্ত বিষয়ের উপর যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা লিখিত দিতে হবে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে। তাই নিরপেক্ষভাবে বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব, রাজ্য নোডাল অফিসার ও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের উপর। ছাপ্পা ভোটের বিরুদ্ধে রীতিমতো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। ছাপ্পা ভোট দেওয়া অবস্থায় যদি কাউকে ধরা যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, রাজ্যে যতগুলো হেলিপ্যাড, বিমানবন্দর রয়েছে, সেখানে কড়া নজরদারি থাকবে। জেলাশাসক যখন কোনও হেলিকপ্টার কিংবা বিমানকে অবতরণের সবুজ সঙ্কেত দেবেন, তখন ইডি আধিকারিক ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকেও দিতে হবে।
রাজীব কুমার জানান, দু’দিনের দীর্ঘ আলোচনায় একটা বিষয় স্পষ্ট জেলাশাসক, পুলিশ সুপাররা প্রশাসনিক স্তরের আধিকারিকরা প্রাথমিকভাবে দায়বদ্ধ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও হিংসামুক্ত করার ক্ষেত্রে। তাঁরা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাঁরা একাজ করবেনই, সঙ্গে নিজের অধঃস্তনদেরও সেই নির্দেশ দিয়ে বিষয়টা স্পষ্ট করবেন। হ্যাঁ, এরপরও নির্বাচনে কিছু না কিছু ঘটনা ঘটে যায়। আমরা আশা করছি, এবার সেরকম হবে না। যদি হয়, তাহলে জেলা প্রশাসন বিষয়টা দেখে নেবে, যদি না দেখে, তাহলে আমরা জেলা প্রশাসনকে দিয়েই ব্যাপারটা দেখিয়ে নেব।