পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্যে চালু হয়েছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। বছর দু’য়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রকল্প বাড়ির মেয়ে- বউদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। প্রথমে চালু চয়েছিল ৫০০ টাকা। চলতি অর্থ বর্ষে তা বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেয়েদের হেঁশেলে এবার ঢুকবে ১০০০ টাকা। বৃহস্পতিবারের বাজেট ঘোষণা হতেই খুশির জোয়ার ঘরে ঘরে।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যে মহিলাদের চলার পথে পথ দেখিয়েছে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা দীপালি সাঁতরা। কারণ এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের তিনি অর্থই দাঁড় করিয়েছেন গোটা পরিবারকে। সোদপুরের এই বাসিন্দার পরিবারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্থে শুরু হওয়া ব্যবসায় বর্তমানে প্রতিদিন আয় ২৫০-৩০০ টাকা। যা দিয়ে তিনজনের সংসার ভালভাবেই চলে। প্রতি মাসের ৫০০ টাকা করে জমিয়ে বুদ্ধির জোরে আজ তার সংসার ভাল ভাবেই চালাচ্ছেন তিনি। কারণ, সেই টাকা দিয়ে তিনি একটি ফুলের দোকান চালু করেছেন। যার নাম রেখেছেন ‘লক্ষীর ভান্ডারের ফুল’।
দোকানটি বর্তমানে স্বামী ও ছেলের হাতে তুলে দিয়েছেন চালানোর জন্য। নিজে বাড়িতে বসে সংসার সামলানোর পাশাপাশি ফুলের মালা তৈরি করেন নিজেই। ফুলে দোকানের কাজ তিনজনেই ভাগ করে নিয়েছেন। স্বামী দোকানে বসেন, ছেলে হাওড়া মার্কেট থেকে ফুল নিয়ে আসে, এবং দীপালি সাঁতরা তা বাড়িতে বসে মালা গেঁথে রেডি করে দোকানে বিক্রির জন্য পাঠান। ছেলে আবার অর্ডার অনুযায়ী সেই ফুল হোম ডেলিভারিও দেয়।
তবে, কীভাবে শুরু হল? করোনার সময় আচমকাই দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে গাড়ি চালানোর কাজ বন্ধ হয়ে যায় স্বামী দিলীপ সাঁতরার। ঘরে বসে পড়েন লকডাউনের সময়ে। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে ভিনরাজ্যে কাজ করে, সে যা আয় করে তা দিয়ে নিজের কোনওরকম চলে যায়। সংসার কীভাবে চলবে তার কুলকিনারা খুঁজে না পেয়ে, করুণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে সাঁতরা পরিবার। সেইসময় পাতুলিয়া এলাকায় দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে ফর্ম ফিলাপ করলে ৫০০ টাকা করে পাওয়া যেতে পারে এই ভাবেই, দীপালিদেবী ছেলেকে বলে ফর্ম আনার জন্য।
ফর্ম ফিলাপ করে জমা দেওয়ার পরই চালু হয় মাসিক ৫০০ টাকা হাত খরচ পাওয়া। সেই টাকা ৫ মাস জমানোর পরেই ছেলেকে বলে একটি ফুলের দোকান করতে, যার খরচ তিনিই দেবেন। সংসারের হাল ধরতে পরিবারকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন দীপালি সাঁতরা। দোকানের নাম কি দেওয়া হবে!
দীপালি দেবী নামও ঠিক করে ফেলেন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফুল’। সেই ব্যবসায় আজ ভালভাবেই চলে যাচ্ছে তিনজনের সংসার। সবসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিতে ভুল করেননি সাঁতরা পরিবার। ছেলে সুরজিৎ সাঁতরা মায়ের এই চিন্তাভাবনা এবং সহযোগিতায় গর্ববোধ করেন।
ফুলের পাশাপাশি বর্তমানে এখন দোকানে জলের বোতল, ছাতুর শরবত-সহ অন্যান্য জিনিসও পাওয়া যায়। দিপালিদেবী মনে করেন, তাকে দেখে এই বাংলার আরও মহিলারা এগিয়ে আসবে। তারাও দিদির দেওয়া এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্থে স্বনির্ভর হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের হাত খরচের জন্য দিয়েছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, আজ সেই অর্থেও যে গোটা একটি পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে তাই করে দেখিয়ে দিয়েছেন দীপালি। প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের মধ্যেও এই দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই প্রকল্পকে আবার অনুসরণও করছে ভিন রাজ্যের মহিলারা। প্রকল্পের ৫০০ টাকা পেয়ে খুশি এবং অনেকেই উপকৃত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।