পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: দিন-দিন মারাত্মকভাবে বাড়ছে ফ্যাসিবাদের দাপট। এ বিষয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল হায়দরাবাদের বালগোপাল মেমোরিয়ালে। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘ফ্যাসিবাদ আন্দোলন’। সেখানে ভাষণ দেন খ্যাতনামা লেখিকা ও চিন্তাবিদ অরুন্ধতী রায়। ভাষণে তিনি দেশের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের লক্ষণগুলি স্পষ্ট করেন। কীভাবে ফ্যাসিবাদ বাড়ছে তার একটা রূপরেখাও তুলে ধরেন অরুন্ধতী।
রাষ্ট্র এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি যখন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে যায় তখন ফ্যাসিবাদ জন্ম নেয়। আজকের ভারতে সেটাই দেখা যাচ্ছে। এমনটাই পর্যবেক্ষণ অরুন্ধতীর। তিনি বলেন, সামাজিক সংকটের ফায়দা তোলে ফ্যাসিবাদ। এই সংকটকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায় তারা। সমাজে যে শ্রেণিকাঠামো রয়েছে তাকে তারা চ্যালেঞ্জ করে। ভারতের মতো দেশে ফ্যাসিবাদ বর্ণবাদকে আঁকড়ে রয়েছে। এখানে একটা দানবিক নজরদারি মেশিন গোটা ব্যাপারটির দিকে তীক্ষ্ণ নজরদারি চালাচ্ছে।
ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে অরুন্ধতী বলেন, এরা নিজেদের স্বার্থে পৌরাণিক অতীতের কাল্পনিক গৌরবগাথা তুলে আনে। শাসক শ্রেণিকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলনে নামে। অযথা বৈদেশিক হুমকির মনগড়া কাহিনি তৈরি করে। রাস্তার সামান্য মারপিট নিয়েও জঙ্গিবাদের বুলি কপচায়। এরা মারাত্মক পুরুষতান্ত্রিক ও মহিলা বিরোধী। এরা জাতপাতের ধারণাকে টিকিয়ে রাখতে চায়। এগুলোই সবই আসলে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। মন্তব্য অরুন্ধতীর।
অগ্নিপথ প্রকল্পের সমালোচনাও শোনা যায় অরুন্ধতীর গলায়। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য যাদের বাহিনীতে নিয়োগ করা হচ্ছে ভবিষৎতে তাদের জঙ্গি হিসাবে কাজে লাগাতে পারে ফ্যাসিস্ট বাহিনী। ইতিমধ্যেই সংঘ পরিবার তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তারা এদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বহু রিপোর্টে এ কথা সামনে এসেছে বলে জানান খ্যাতনামা এই লেখিকা তথা সমাজসেবী।
এই লেখিকা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী এই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করছে কর্পোরেটরা। অরুন্ধতী রায় জানান,ভারতে ফ্যাসিবাদের পুরো প্রকল্পটি কর্পোরেট তহবিল দ্বারা পরিচালিত। তাতে যে নির্বাচনী বন্ডের বড় ভূমিকা রয়েছে তাও প্রমাণিত। সে কারণে নির্বাচনী বন্ড এবং কর্পোরেট নীতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে আরও অস্বচ্ছ রাখা হয়েছে।
ফ্যাসিবাদীদের নিশান করে তিনি বলেন, ‘আপনারা মানুষকে গৌরবময় পৌরাণিক অতীতের কল্পিত কাহিনি শুনিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারেন।’ তাতে কার কি-ই বা বলার আছে। নোটবন্দি এবং করোনাকালে অপরিকল্পিত লকডাউনের কারণে নিদারুণ সংকটে পড়েছিলেন গরিব মানুষ। কিন্তু কে কী বলবে।
যারা অপমানিত তারা সেই ব্যাক্তিকে সম্মান করতে বাধ্য হচ্ছেন, যিনি তাদের অপমান করেছেন। কিন্তু ঠিক কী কারণে তারা এমন সম্মান করছে, সেটাই মূল প্রশ্ন। বলেছেন অরুন্ধতী।
বামপন্থী এবং উদারবাদীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আপনারা আশাহত হবেন না। মনে রাখবেন চুরি যতই ধারালো হোক, তা দিয়ে সমুদ্র কাটা যায় না।