পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ পুবের আকাশ তখন সবে লাল হতে শুরু করেছে। বিশ্ব চরাচর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভোরের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো। মুয়াজ্জিনের আজানের সুমধুর সুরে শুরু হয়েছে আরও একটি দিন।
গ্রামের আলপথ, মাঠ পেরিয়ে সাদা কুর্তা পাজামা পরিহিত কয়েকটি শিশু এগিয়ে চলেছে বুকে শ্রদ্ধায় জড়ানো রেহাল-কায়দা।
ডোমারের পূর্ব খাটুরিয়া জামে মসজিদ নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মক্তবের ছাত্র এরা। গতকাল হুজুর কি পড়িয়েছেন তা নিয়েই চলছে পথে চলতে চলতে আলোচনা।
একটা সময় এপার বাংলা বা ওপার বাংলার গ্রামের ভোর হত এইসব মক্তব গমনরত শিশুদের কলকাকলিতে।দূর থেকে শোনা যেত শিশুদের সম্মিলিত কলধ্বনি ‘অজুর ফরজ চারটি’…।
শহর, গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মুসলিম শিশুদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় পাঠশালা মক্তব। শিক্ষাবিদদের মতে এই সব মক্তব গুলিতে সুপরিকল্পিত শিক্ষা প্রদান পাঠক্রম না থাকার জন্য অভিভাবকরা সন্তানদের আর মক্তবে পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেননা।
অনেকেই বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখে সন্তানকে আরবি শেখাচ্ছেন। এর একটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মক্তব শিক্ষার ওপরে। কোথাও প্রায় উঠেই গিয়েছে মক্তব শিক্ষা। কোথাও আবার খুঁড়িয়ে চলছে। মক্তব শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণ করতে হবে এটাই হল একমাত্র সমাধান। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
মুসলিম শিশুদের ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের প্রথম পাঠশালা মক্তব। মক্তব হারিয়ে যাওয়া মানে মুসলিম শিশুদের ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের প্রাথমিক ও সহজ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। তাই বাংলাদেশে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন শুরু করেছে মক্তব মিশন।
এই ‘মিশন মক্তবে’ একটি শিশুকে ছ মাসের মধ্যে কায়দা শেখানো হবে। এমন ভাবে তাকে কায়দা রপ্ত করানো হবে যাতে সে কায়দা শেষ করতে করতেই কুরআন পড়তে পারে।
কায়দা পড়ানোর সময় তাকে কেবল সেই সব দোয়া শেখানো হবে যা তার প্রয়োজন। আরবির সঙ্গে তাকে সমন্বয় রেখে বাংলা শেখানো হবে। এছাড়াও থাকবে অঙ্ক এবং ইংরেজি।
একটি মক্তব পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেন ইমাম।তারা যদি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন, তাহলে অবশ্যই দুই বছরের মধ্যে একটি শিশুকে পূর্ণ কুরআন পড়ানো সম্ভব। লক্ষ্য না থাকলে পাঁচ বছরেও কায়দা শেষ করানো যায় না।
শুরু হতে চলেছে আন্তঃ মক্তব প্রতিযোগিতা। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে।তিন বছরের পাঠক্রমে কুরআন এবং প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া সম্ভব। কুরআন পাঠের সঙ্গে মক্তবে শিশুদের উপযোগী করে লেখা কুরআন তরজমা পড়ানো যেতে পারে। অন্তত যে পাঁচটি সূরা সব সময় পড়া হয়, সেগুলোর তরজমা। হাদিস এবং দোয়ার বইয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ছবি ও রং। এতে কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে।
উল্লেখ্য ৭১১ হিজরিতে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পরপরই ভারতবর্ষে মক্তব ও মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা হয়। তবে ভারতবর্ষে মক্তব ও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিস্তার ঘটে মূলত মোগল আমলে। সেই শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিল।