পারিজাত মোল্লা: শনিবার সিটি সেশন কোর্টে পেশ করা হয়েছিল রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান কে। তবে এদিন মিলল না জামিন। ইডি হেফাজত শেষে রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে জেল হেফাজতে পাঠাল সিটি সেশন কোর্ট। শনিবার বাকিবুরের জামিনের আবেদন খারিজ করে তাঁকে আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক ।
ইডি জেলে গিয়ে বাকিবুরকে জেরা করতে পারবে বলে জানিয়েছে আদালত।শনিবারই শেষ হয় বাকিবুরের ইডি হেফাজতের মেয়াদ। এদিন দুপুরেই আদালতে পেশ করা হয় সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ীকে। আদালতে বাকিবুরের জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু, তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেন ইডির আইনজীবী।
ইডির আইনজীবী বলেন, -‘ বাকিবুরের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। রেশন থেকে খাদ্যশস্য পাচারের ৩টি অভিযোগ আগেই উঠেছিল। কিন্তু, তাঁর মাথায় প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি রাজ্য পুলিশ। গ্রেফতার অনেক দূরের কথা, তাঁকে জেরাও করা হয়নি’। ইডি-র আইনজীবী আরও বলেন, -‘ বাকিবুর প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাঁকে জামিন দেওয়া হলে, তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে।
রেশন মামলায় তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক তথ্য উঠে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অভিযুক্তকেও ফের জেরা করার প্রয়োজন হতে পারে’। এরপর বিচারক জানতে চান, -‘বাকিবুর যে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তার কী কোনও প্রমাণ রয়েছে? এর জবাবে ইডির আইনজীবী ৩টি সংস্থার নাম উল্লেখ করেন। যে সংস্থায় এক সময় যৌথভাবে ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স’ পদে ছিলেন বাকিবুর রহমান ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পরিবারের সদস্যরা। ওই সংস্থাগুলি থেকে জ্যোতিপ্রিয় প্রায় ১২ কোটি টাকা ঋণ নেন বলেও জানিয়েছে আদালত।
রেশন বণ্টন মামলায় আর্থিক যোগ খুঁজে পেতে জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে বাকিবুরকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও ইডি সূত্রে প্রকাশ ।দুপক্ষের সওয়াল – জবাব শুনে অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানকে আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন বিচারক।ইডি অবশ্য জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রী এবং মেয়েকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনটি কোম্পানির বিষয়ে জোত্যিপ্ৰিয় স্ত্রী ও মেয়েকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা কোনওরকম যোগাযোগ অস্বীকার করেন।
কিন্তু প্রাক্তন আপ্ত সহায়কই ইডি-কে জানিয়ে দেন, -‘ওই তিনটি সংস্থার মালিক জোত্যিপ্ৰিয় মল্লিক’। এই তিন শেল কোম্পানি জোত্যিপ্ৰিয় কন্ট্রোল করতেন অভিযোগ ইডির।এই কোম্পানিগুলি কালো টাকা সাদা করার জন্য খোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ ইডির।শনিবার প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিত্ দাস ও বর্তমান আপ্ত সহায়ক অমিত দে-কে তলব করে ইডি। কারণ দু জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি।
দু জনের বাড়িতে ইডি তল্লাশি করেছিল। অভিজিত্ দাসের মা ও স্ত্রীকে ডিরেক্টর কেন করা হয়েছিল? তাঁদের কী ভূমিকা ছিল? এই কোম্পানি গুলি কীভাবে কেন খোলা হয়েছে? সে বিষয়ে তাঁরা কী জানতেন? এই সব বিষয়ে তদন্ত করছে ইডি।ইডি সূত্রে খবর, এক সাক্ষী স্বীকার করে নিয়েছেন, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত বাকিবুরের ৬৮ লক্ষ টাকা তত্কালীন খাদ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছিল।
শুধু তাই নয় আরেক জনের বয়ানে উল্লেখ রয়েছে যে, বাকিবুরের নির্দেশে ১২ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রী জোত্যিপ্ৰিয় মল্লিককে। রেশন দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার জন্যই এই কোম্পানি খোলা হয়েছিল বলে নিশ্চিত কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি।প্রসঙ্গত গত শুক্রবার ইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কে সিটি সেশন কোর্টে পেশ করা হলে এজলাসেই শারীরিক অসুস্থতার জন্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।চিকিৎসকরা ছুটি দিলে তখনই দশদিনের হেফাজতে পাবে ইডি। সেসময় বাকিবুর রহমান কে মুখোমুখি বসিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কে জেরা করতে পারে ইডি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।