তালিবান জানিয়েছে, নতুন সরকারের বিভিন্ন পদে নারীরা কাজ করার সুযোগ পাবেন। বিশেষত স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি থাকবে। নয়া সরকারে দেশের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতির অংশগ্রহণ থাকবে। তবে প্রধান সরকারি পদে থাকবেন আমির উলমুমিনিন বা ‘বিশ্বাসীদের কমান্ডার’।
পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ আর দু’দিন। তারপরই দখলদারদের আফগানিস্তান থেকে বিদায় করে দেবে আফগান তালিবান। মার্কিন পরাধীনতার গ্লানি থেকে মিলবে মুক্তি। গোটা দেশে জারি হবে শরিয়াহ আইন। সেই লক্ষ্যেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সচল করতে শুরু করেছে তালিবান। যোগ্য ও অভিজ্ঞ তালিবান সদস্যদের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বিভাগও আলাদাভাবে তৈরি। এখন সরকার গঠন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থানে বিশ্ব শঙ্কা প্রকাশ করলেও সশস্ত্র দলটি শান্তি কায়মের বার্তাই দিয়ে যাচ্ছে। এবার তারা জানাল– কোনও একচ্ছত্র শাসন নয়– দেশের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতির প্রতিনিধি নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর এ সরকারের নেতৃত্বে যিনি থাকবেন তার উপাধি হবে আমিরুল মুমিনিন বা ‘বিশ্বাসীদের কমান্ডার’ যিনি ইসলামি আমিরাতকে নেতৃত্ব দেবেন। শুক্রবার কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত তালিবানের রাজনৈতিক দফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
১৫ আগস্ট তালিবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর থেকে তাদের সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। দলটি কোনও ধরনের সরকার গঠন করে এবং তাদের শাসনব্যবস্থা কেমন হবে– তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ রয়েছে। এর মধ্যেই তালিবান নেতারা বলেছেন– তাঁরা অংশগ্রহণমূলক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের চিন্তা করছেন। এই সরকারে সব উপজাতি থেকে উঠে আসা নেতাদের নেওয়া হবে। নতুন সরকারের জন্য এরই মধ্যে প্রায় এক ডজন নেতার নাম আলোচনায় এসেছে। তবে এই সরকারের মেয়াদ স্পষ্ট নয়।
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে জাতিগত বৈচিত্র্য। ৪ কোটি মানুষের এই দেশে কোনও গোষ্ঠীরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠী হল পশতুন। মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশেরও বেশি তারা। অষ্টাদশ শতক থেকেই আফগান রাজনীতিতে আধিপত্য রয়েছে তাদের।
তালিবান জানিয়ছে– ভবিষ্যৎ সরকার গঠন ও মন্ত্রীদের মনোনয়নের জন্য একটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিচার– অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা– প্রতিরক্ষা– বিদেশ– অর্থ ও তথ্যমন্ত্রী এবং কাবুল-বিষয়ক বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কে হবেন– তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য তালিবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদর এবং তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুব কান্দাহার থেকে রাজধানী কাবুলে এসেছেন। সূত্রের খবর– তালিবান তাদের সরকারে নতুন মুখ আনতে চাইছে। এর মধ্যে তাজিক ও উজবেক– হাজারা নেতারাও থাকবেন। তবে আফগানিস্তানে পরবর্তী মূল সরকারের শীর্ষ পদে কে বসবেন– সে-ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।
তবে সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদরই প্রথম পছন্দ– এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে সরাসরি সরকারি পদে না বসে ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনেইয়ের মতো ‘সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা’র আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেন বর্তমান তালিবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।