পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: আফতাব আমিন পুনাওয়ালার লিভইন পার্টনার শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশ জুড়ে ইতিমধ্যেই ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। ঘটনার বিভৎসতায় সকলেই শিউরে উঠছেন। কিন্তু জানেন কি আজ থেকে ১২ বছর আগে নিজের স্ত্রীকে ৭০ টুকরো করেছিলেন এক ব্যক্তি। দেরাদুনের এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এই শিউরে ওঠার মত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। স্ত্রী কে হত্যা করে ৭০ টুকরো করেছিলেন রাজেশ গুলাতি নামে ওই ইঞ্জিনিয়ার। ২০১৭ সালে রাজেশ কে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
১৯৯৯ সালে অনুপমার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ। বিয়ের পর এই দম্পতি চলে যান মার্কিন মুলুকে। সেখানে সুখেই কাটছিল তাঁদের দাম্পত্যজীবন। ২০০৮ সালে গুলাতি দম্পতি ফিরে আসেন দেশে। ফের বসবাস করতে শুরু করেন দেরাদুনে। কিন্তু ততদিনে তাঁদের দাম্পত্য জীবনে ঘনিয়ে এসেছে ঘনঘোর অশান্তি। ঝগড়া এমনকি হাতাহাতি ছিল নিত্যনৈ্মিত্তিক ঘটনা।
২০১০ সালের ১৭ অক্টোবর চরমে ওঠে অশান্তি। সেইদিন রাতেই অনুপমাকে খুন করেন রাজেশ। দেরাদুন পুলিশ জানিয়েছিল অশান্তি চরমে ওঠার পর রাজেশ চড় মারেন অনুপমাকে। দেওয়ালে ঠুকে দেন মাথা। এরফলে জ্ঞান হারান অনুপমা। রাজেশ ভয় পেয়ে যান ভাবেন জ্ঞান ফিরলে যদি অনুপমা পুলিশকে সব জানিয়ে দেন। এরপরেই স্ত্রীকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাষরোধ করে হত্যা করেন রাজেশ।
এরপর একই ভাবে আফতাবের কায়দায় স্ত্রীর দেহ ৭০ টুকরো করেন রাজেশ।গন্ধ যাতে না বের হয় তারজন্য দেহ ভরে রেখে দেন ডিপফ্রিজের মধ্যে। এরপর সময় সুযোগ মত সেই ৭০ খন্ড দেহ ছড়িয়ে দেন নানা জায়গায়।
দুঁদে পুলিশ অফিসাররা বলছেন আফতাব এবং শ্রদ্ধার ঘটনার সঙ্গে যেন হুবহু মিলে যাচ্ছে প্রেক্ষাপট। রাজেশ এবং অনুপমার যমজ সন্তান ছিল। রাজেশ তাদের বলেছিলেন মা একটা জরুরি কাজে দিল্লি গিয়েছেন। ফিরতে সময় লাগবে। বেশ কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর অনুপমার ভাই আসেন দিদির খোঁজে। রাজেশ তাকেও বলেন অনুপমা দিল্লি গিয়েছেন। কিন্তু অনুপমার ভাইয়ের সন্দেহ হয়। তিনি থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। এরপর তদন্তে নামে দেরাদুন পুলিশ।রাজেশের বাড়ির ডিপফ্রিজ থেকে উদ্ধার হয় অনুপমার কাটামুন্ডু।
শ্রদ্ধার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ফের ভেসে উঠেছে রাজেশ গুলাতির অনুপমা হত্যা মামলার কথা। রাজেশের আইনজীবী এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যকে জানিয়েছেন খুব সম্প্রতি রাজেশের ২১ দিন প্যারোল মঞ্জুর করা হয়। তিনি জেলে অসুস্থ পড়েছিলেন, অস্ত্রোপচার করতে হয়। তারপরই তাঁর প্যারোল মঞ্জুর হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই রাজেশ গুলাতি মামলার পরবর্তী শুনানি।
মনোবিদদের কথায় চরম মানসিক বিপর্যয়, প্রবল ইগো অনেককিছুই কাজ করে এই সময়ে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পর আসে চরম অনুশোচনা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আইনের হাতে ধরা পড়ার ভয়। বেশিরভাগ সময়ে ভেবে পাননা কি করা উচিৎ। মনোবিদদের একাংশের দাবি শ্রদ্ধাকে হত্যা করে এহেন নৃশংস ঘটনা ঘটানোর পরেও কি আফতাবের মনে কোথাও রয়ে গিয়েছিল শ্রদ্ধার জন্য সামান্য সহানুভূতি বা ভালোবাসা। যার থেকে মন খারাপ করলে ফ্রিজ থেকে শ্রদ্ধার কাটা মুন্ডু বের করে দেখতেন আফতাব।
মনোবিদদের পাশাপাশি রাজেশ গুলাতি কেসের তদন্তকারী প্রবীণ অফিসাররা বলছেন রাজেশকে গ্রেফতার করার পর তিনি কিন্তু তাঁর যমজ সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন। ১২ বছর আগের সেই দিন আজও যেন চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। আফ তাব- শ্রদ্ধার ঘটনা ফের উস্কে দিল সেই মর্মান্তিক ঘটনার ছবি।