পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে হঠাৎই বিশ্বের শীর্ষ আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভয়াবহ হামলায় বিপর্যস্ত মায়ানমার। রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে, চলতি বছর রাষ্ট্রীয় মদদে আফিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ শতাংশ বাড়িয়ে এক হাজার ৮০ টনে উন্নীত করবে মায়ানমার। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা শেষে তালিবানের ক্ষমতায় আসার পর গত বছর মাদক নিষেধাজ্ঞার পর দেশটিতে ঐতিহ্যগতভাবে পপি ফুলের চাষ কমে যায় ৯৫ শতাংশ। এই কারণে তালিবান শাসিত দেশটি চলতি বছর মাত্র ৩৩০ টন আফিম উৎপাদন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওসের সীমান্ত ঘেঁষা তথাকথিত ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ ঐতিহাসিকভাবে হেরোইন উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান আফিমের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। বিশ্বসংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষের দিকে সামরিক জান্তা শাসিত মায়ানমারের কৃষকদের পপি চাষে লোভ দেখাতে থাকে বিভিন্ন মাফিয়া চক্র। অতি মুনাফার আশায় অভাবগ্রস্ত কৃষকরা সেই ফাঁদে পা দেয় এবং রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির বাইরে থাকা বিপুল পরিমাণে পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চলে পপি চাষ শুরু করেন। এতে করে পপি ফুল থেকে পাওয়া আফিম উৎপাদনে দেশটিকে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যায়।
পারস্য, মিশর ও মেসোপটেমিয়ায় প্রাচীন সভ্যযুগে আফিমের চাষ হতো। মধ্যযুগের চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক আবু-আলী-ইবনে-সিনা তার চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা শাস্ত্রে দেখা গেছে মানসিক ও শারীরিক অবসাদসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ব্যবস্থাপত্রে আফিম ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন। তবে পোস্ত চাষে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মূল কারণটা অজানা নয়। যে ফলের বীজ পোস্তদানা বলে আমরা খাই, তা থেকেই আফিম হয়। আধপাকা ফল চিরে দিলে বেরোয় ঘন ক্ষীরের মতো আঠালো তরল (ল্যাটেক্স গাম)। তা থেকে তৈরি হয় মরফিন, যা সর্বোত্তম ব্যথানাশক, ক্যানসার রোগী-সহ নানা যন্ত্রণাকাতর মানুষের চিকিৎসায় যার ব্যবহার হয়। মরফিন-সহ চার রকম ‘ওপিয়েট’, যেগুলি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে প্রভাবিত করে ব্যথার উপশম করে, তন্দ্রা ও প্রশান্তি আনে, সেগুলি কেবল ‘ওপিয়াম পপি’ থেকেই পাওয়া যায়। সেই জন্য পোস্ত গাছ বা পপিকে ঔষধি-বনস্পতির মধ্যমণি মনে করা হয়। কিন্তু মরফিন, এবং তা থেকে তৈরি হেরোইন, তীব্র মাদকাসক্তি জন্মাতে পারে। তাতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়, বেশি মাত্রায় নিলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই সারা বিশ্বেই পোস্ত চাষ কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।