পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেশটিতে। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়ার বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করেছে। তার সঙ্গে সাথ দিয়েছে আরও বেশ কিছু ছোটবড় দল। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ তা মেনে নেয়নি।
আমেরিকা বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে শেখ হাসিনা সরকারের উপর। তবে মুজিবকন্যা অনড়। ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদী। হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কারও তোয়াক্কা করি না। কারও চোখরাঙানি সহ্য করব না। আমরা এভাবেই নির্বাচন করব। এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে বলেই তিনি আশা করেছেন। জয়ের ব্যাপারেও আওয়ামী লিগ আশাবাদী। নির্বাচন ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লিগ নিজ দফতরে খিচুড়ি ভোজন উৎসবের আয়োজন করেছিল। সাংসদ হতে ইচ্ছুক তারকারাও আওয়ামী লিগের মনোনয়ন ফর্ম পূরণ করছেন। এর মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সিনেমার অভিনেতা ফিরদৌস অন্যতম। তবে এরই মাঝে বিরোধীরা পালটা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আবার জনগণের একাংশও বাংলাদেশের গুম-খুন নিয়ে ক্ষিপ্ত। মঙ্গলবার এর প্রতিবাদে ঢাকার প্রেস ক্লাবের সামনে বড় জমায়েত করে বিক্ষুব্ধরা। তাদের আর্তি, বাঁচার অধিকার না থাকলে সবাইকে একসঙ্গে মেরে ফেলুন। সেখানে দাদার সঙ্গে এসেছে তার দুই ছোট্ট নাতনী বর্ষা ও নূরী। কারাবন্দি মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে মুক্তি দাবি করেন দুধের দুই শিশু। বাবা রাজনৈতিক নেতা আধুল হামিদ ভূইয়াকে না পেয়ে মা পুতুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। একইভাবে কারাবন্দি আবুল কালামের ছয় বছরের ছেলে সিয়ামও মায়ের সাথে এসেছে এই স্বজনদের এই প্রতিবাদ সমাবেশে। শিশু সিয়াম কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার বাবার মুক্তির দাবি জানান।
সিয়ামের মতো দুই শতাধিক কারা-নির্যাতিত, খুন-গুমের শিকার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্বজনরা আসেন প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে। এসময় পরিবারের সদস্যরা ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার, নির্যাতনের হৃদয়বিদারক বর্ণনা দেন।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুম-খুন ও কারা নির্যাতিত নেতাদের স্বজনদের নিয়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন শেষে নির্যাতিত পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রেসক্লাবে সামনেই বাধা দেয় পুলিশ।
২০১৩ সালে গুমের শিকার কাওসারের স্ত্রী মিনু আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে যখন গুম করা হয় তখন আমার সন্তানের বয়স তিন। ১০ বছর ধরে সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী বলেন, রাত দুটোর দিকে দরজা ভেঙ্গে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমার বৃদ্ধ স্বামী পুলিশকে কত আকুতি মিনতি করলো যে, আমি বয়স্ক, অসুস্থ, নির্দোষ, আমাকে নিয়ে যাবেন না। কিন্তু পুলিশ বাড়ি ভাঙচুর করে নির্দয়ভাবে তাকে তুলে নিয়ে যায়।