পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: গাজায় যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। এর কারণ অবশ্যই ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন, হামাসের মনোবল ও রণকৌশল। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজায় গণহত্যা চালালেও হামাসের প্রতিরোধের দেওয়াল ভাঙতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। পশ্চিমা সহায়তায় গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলের কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিও হয়েছে। হামাসের হামলায় গাজার প্রতিটি স্থানে ইসরাইলি ব্যাকফুটে যেতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আর দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল এই যুদ্ধে কার্যত পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির মধ্যদিয়ে যায়নবাদী ইসরাইল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর চরম পরাজয় হয়েছে। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ঢুকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরাইলের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ও সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হামাসের হামলা তাক লাগিয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে। হামাসকে নির্মূলের নামে গাজায় গণহত্যা চালালেও সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পায়নি দখলদার বাহিনী। এমন অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও অবশেষে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে তেল আবিব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার মাধ্যমে হামাসের কাছে পরাজয় স্বীকার করল নেতানিয়াহু সরকার। গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল আর ভবন তন্নতন্ন করে খোঁজার পরও হামাসের হাতে আটক বন্দিদের সন্ধান না পাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়ে ইসরাইল ও তার মিত্র আমেরিকা। তাই যুদ্ধবিরতি ছাড়া তাদের সামনে আর কোনও উপায় ছিল না। যদিও কয়েকদিন আগেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে হামাস সদস্যদের নির্মূলে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হুমকি দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু।
এদিকে,পশ্চিমাদের মিত্র শক্তিশালী ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের হামলার পর দলটির শক্তিমত্তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের মুখে অভ্যন্তরে ঢুকে ভয়াবহ হামলার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন এখন হামাস। ফিলিস্তিনিদের নতুন করে তারা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। হামাসের এই উত্থানের পেছনে কয়েকটি বিষয় কাজ করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতদিন পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করায় কোনও দেশই তাদের সরাসরি সহযোগিতা কিংবা সমর্থন দেয়নি। তবে ধীরে ধীরে সেই অবস্থা বদলাচ্ছে। ইরানের কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সহযোগিতার পাশাপাশি তুরস্কের কাছ থেকে গোয়েন্দাসহ সামরিক তথ্যের সহযোগিতা পাচ্ছে হামাস। আর পরোক্ষভাবে হামাসকে সযোগিতা করে যাচ্ছে চিন ও রাশিয়া। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে হামাসের পাশে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ কাতার।
লেবানন ও মিশর থেকেও সমর্থন পাচ্ছে দলটি। ফলে ধীরে ধীরে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হচ্ছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী হামাস।