বিশেষ প্রতিবেদনঃ ৯/১১ হামলার ২০ বছর কেটেছে। এর মধ্যে বিশ্বের রাজনৈতিক অবস্থা অনেক বদলালেও মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ কিন্তু কমেনি। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে ইসলামোফোবিয়া এক জ্বলন্ত সমস্যার নাম। মুসলিম দেখলেই গায়ে জ্বর আসে এরকম মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তা না হলে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, ইতালি, জার্মানি, ব্রিটেন ও আমেরিকার মতো দেশে মুসলিমদের ওপর লাগাতার হামলা চলত না। মুসলিম বিদ্বেষী আইনও প্রণীত হত না।
বিশ্লেষকরা বলছেন ৯/১১ হামলার পর থেকেই মুসলিম বিমুখ হতে শুরু করে পশ্চিমারা। তাদের মনে এক ভয় ঢুকে যায় যে, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী-আত্মঘাতী বোমারু বা বন্দুকবাজ। তবে সত্যিটা হল, এই ধারণা তৈরির পেছনে উগ্র মতাদর্শের রাজনীতিবিদদের প্রোপাগান্ডার ভূমিকা রয়েছে। তারাই ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য মুসলিম বিরোধী রাজনৈতিক ঘুঁটি চেলে নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখে থাকেন। এর ফলে সমাজে বৈষম্য তৈরি হয় জন্ম নেয় বিদ্বেষ। বিভিন্ন উগ্র ডানপন্থী দলগুলির পোষা গুন্ডারা মুসলিমদের হত্যায় মেতে ওঠে– মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয় অবলীলায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন মুলুকে ৯/১১ হামলার পিছনে আসল দায়ী কে? যদিও এ বিষয়ে আমেরিকাও শতভাগ নিশ্চিত নয়। ওয়াশিংটনের দাবি, আল-কায়দার বিন লাদেন এটি করেছেন। তবে এর জন্য অকাট্য কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি সিআইএ বা এফবিআই। অথচ আমেরিকা সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান চালিয়ে আফগানিস্তান– ইরাক– ও সিরিয়ার মতো দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টরা শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধাপরাধীদের ধরতে গিয়ে অসংখ্য মানুষের জীবনকে নরকে পরিণত করেছে। মার্কিন মুসলিমদের প্রতিও বিদ্বেষ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। এর উদাহরণ হল, আমেরিকার বাসিন্দা শাহানা হানিফ ও তার বোন। আজ সেই সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর অতিক্রান্ত হলেও রাস্তায় বের হলে এদের শুনতে হয় অকথ্য গালিগালাজ। শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী মার্কিনিরা পথে-ঘাটে এই হিজাব পরিহিতা দুই মেয়েকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে ডেকে ওঠে। কেউ এদের গায়ে থুতু ছেটায়।
২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার দিনের ঘটনা। তখন শাহানা হানিফের বয়স ১০ ও তার বোন তার থেকে কয়েক বছরের ছোট। তারা তাদের ব্রুকলিনের বাড়ি থেকে স্থানীয় একটি মসজিদের দিকে যাচ্ছিল। মনে ভয় নিয়ে তারা সেদিন খুব জোরে ছুটেছিল। সেদিন সকলেই তাদের দিকে কেমন যেন একটা চোখে তাকিয়ে ছিল। হানিফের মতো এরকম অসংখ্য মুসলিমকে আমেরিকায় আজও বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। নয় এগারোর পর থেকে মুসলিম সমাজকে থাকতে হচ্ছে কঠোর নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে। মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। মুসলিমদের প্রতি সন্দেহ একটুও কমেনি।